১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১:৪৩ এম

আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল থেকে বাংলাদেশ, পুরো পৃথিবী জুড়ে চলছে আন্তর্জাতিক ফুটবলের ব্যস্ততা।
দক্ষিণ আমেরিকা ব্যস্ত বিশ্বকাপ বাছাইয়ে, ইউরোপে চলছে ইউরো বাছাইপর্ব, আর এশিয়াতে তোড়জোড়
বিশ্বকাপ বাছাই শুরুর আগের প্রস্তুতি নিয়ে। উল্লেখযোগ্য ম্যাচগুলোর রেকর্ডগুলোতেই এক
নজর চোখ বুলিয়ে নেওয়া…
৭৯
বলিভিয়ার বিপক্ষে দুইবার জালে বল জড়ানোর পর নেইমারের আন্তজার্তিক গোল সংখ্যা। কাতার
বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে সবশেষ ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে গোল করেছিলেন নেইমার। ওই গোলে
ছুঁয়েছিলেন কিংবদন্তী পেলেকে। ডিসেম্বরে পেলেকে হারিয়ছে পৃথিবী, এরও সাত মাস পর নেইমার
ছাড়িয়ে গেলেন ফুটবলের রাজাকে। ৯১ ম্যাচে পেলের
গোল ছিল ৭৭, আর নেইমার ৭৯ গোল করলেন ব্রাজিলের হয়ে নিজের ১২৫ তম ম্যাচে।
আরও পড়ুন: জিদানের কাছে মেসি মানে 'ম্যাজিক'
২৯
দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন
লিওনেল মেসি। ইকুয়েডরের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে নিজের ৬১ তম ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন
আর্জেন্টাইন অধিনায়ক, করেছেন গোলও। সবার ওপরে এতোদিন একাই রাজ করছিলেন উরুগুয়ের লুইস
সুয়ারেজ। ৫৮ ম্যাচে সুয়ারেজের গোলও ২৯।
৬৫
মেসির ফ্রি কিক গোল সংখ্যা। ফ্রি কিক থেকে সবচেয়ে বেশি গোল করাদের তালিকায় ডেভিড বেকহ্যামকে
ছুঁয়েছেন মেসি। আর গোল করলেই ছুঁয়ে ফেলবেন ওপরে থাকা রোনালদিনিয়োকে।
১৬
১৬ বছর ৫৭ দিন বয়সে স্পেনের জার্সি গায়ে মাঠে নেমেই রেকর্ড গড়ে ফেলেছিলেন লামিন ইয়ামাল।
বনে গেছেন স্পেনের ইতিহাসের সবচেয়ে তরুণ ফুটবলার। ম্যাচটা আরও বেশি রাঙিয়েছেন গোল করে।
৭৪ মিনিটে জর্জিয়ার বিপক্ষে ইয়ামালের গোল তাকে বানিয়ে দিয়েছে আন্তর্জতিক ফুটবলের তৃতীয়
কনিষ্ঠ গোলস্কোরার। তার সামনে আছেন কেবল নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের স্যাম জনস্টোন (১৫
বছর ১৬০ দিন) ও হাঙ্গেরির জোসেফ হোভার্থ (১৬ বছর ১২দিন)। যদিও ওই দুইটি রেকর্ডের সময়কাল
বহু আগের। স্যাম জনস্টোন গোল করেছিলেন ১৮৮২ সালে আর হোভার্থ ১৯০৬ সালে।
৩
নিজের ৬৫ তম ম্যাচে এসে আন্তর্জাতিক ফুটবলে হ্যাটট্রিকের দেখা পেয়ছেন আলভারো মোরাতা।
জর্জিয়ার বিপক্ষে ২২, ৪০ ও ৬০ মিনিটে করেছেন গোল।
১৩
১৩ বছর পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে দক্ষিণ আমেরিকার দলের বিপক্ষে জয় পেয়েছেন মার্সেলো বিয়েলসা।
উরুগুয়ের ডাগআউটে বিয়েলসার শুরুটা হয়েছে চিলিকে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়ে। মজার বাপার, সবশেষ
দক্ষিণ আমেরিকার কোনো দেশের বিপক্ষে তার জয় ছিল ২০১০ সালে, তখন প্রতিপক্ষ ছিল উরুগুয়ে
আর তিনি ছিলেন চিলির কোচ। অবশ্য ২০১১- এর পর
থেকেই আন্তর্জাতিক ফুটবলের বাইরে ছিলেন তিনি।
৪
উরুগুয়ের হয়ে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে ৪ গোল করেছেন ফেদেরিকো ভালভার্দে, সবগুলোই বক্সের
বাইরে থেকে করা শটে। চিলির বিপক্ষে প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে করেছেন সাম্প্রতিক গোলটি।
১
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের প্রথম গোল পেয়েছেন ফ্রান্সের মার্কাস থুরাম। ২৬ বছর বয়সী
ফরোয়ার্ড ফ্রান্সের হয়ে ৯৮ বিশ্বকাপ জয়ী কিংবদন্তী লিলিয়ান থুরামের ছেলে। জাতীয় দলে
১৪২ ম্যাচ খেলে ডিফেন্ডার থুরাম গোল করেছিলেন ২টি। দুই গোলই ছিল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে
ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে। বাবা-ছেলের জাতীয় দলের হয়ে গোল করার কীর্তি ফ্রান্সে এছাড়া আছে
আর একটি- জা জোরকায়েফ ও ইউরি জোরকায়েফের।
৮
টানা ৮ আন্তর্জাতিক ম্যাচে গোল করেছেন লিওনেল মেসি। সবশেষ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের
ম্যাচে পোল্যান্ডের বিপক্ষে গোল পাননি তিনি।
৪
৭ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের শেখ মোরসালিন সম্মিলিত গোল ও অ্যাসিস্ট সংখ্যা।
১৭ বছর বয়সী অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার স্টার্টিং ইলাভেনে ছিলেন ৫ ম্যাচে। গোল ৩, অ্যাসিস্ট
১। মালদ্বীপ, ভূটান ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে গোল করেছেন মোরসালিন।
No posts available.
৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:১৪ পিএম

সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আজ মঙ্গলবার ভোর ৬ টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ছিলেন দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তাঁর মৃত্যুতে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
দেশের শীর্ষ দুই ক্রীড়া সংস্থা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনসহ (বাফুফে) শোক জানিয়েছে অন্যান্য ফেডারেশনগুলো। শোকাহত দেশের ক্রীড়া সাংবাদিকদের সংগঠন এবং ক্রীড়াবিদরা।
বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন (বিওএ) খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে এক বিবৃতি জানিয়েছে। সেখানে তারা লিখেছে, ‘তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরম মহিমান্বিত ব্যক্তিত্ব। গণতন্ত্র, বহুদলীয় রাজনীতির সংস্কৃতি এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর অসামান্য অবদান এবং ত্যাগের জন্য বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে তিনি চির স্মরণীয় হয়ে আছেন এবং থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ দেশের খেলাধুলার উন্নয়ন এবং বিওএ’র কার্যক্রম পরিচালনায় আমাদের উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করেছে। তাঁর অসাধারণ নেতৃত্ব এবং গুণাবলীর জন্য তিনি বিওএ’র প্রতিটি সদস্য ও কর্মকর্তাগণের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন।’
বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলমের স্বাক্ষরিত এক শোক বার্তায় ফেডারেশনটি জানিয়েছে, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছে। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক প্রভাবশালী নেত্রী ও জাতীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তাঁর নেতৃত্ব, অবদান ও ত্যাগ জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।’
বিবৃতি দিয়ে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন, বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশন, তায়কোয়ান্দো ফেডারেশন, সাঁতার ফেডারেশন, কাবাডি ফেডারেশন, উশু ফেডারেশন, বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশন, বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনসহ দেশের সব ক্রীড়া ফেডারেশনই বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশের ক্রীড়া লেখক ও সাংবাদিকদের সবচেয়ে পুরনো সংগঠন বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি (বিএসপিএ)। সংগঠনটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ‘দেশের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস এসোসিয়েশন (বিএসপিএ) গভীরভাবে শোকাহত। বিএসপিএ তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছে এবং মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছে যেন তাঁর পরিবারকে এই শোক সহ্য করার শক্তি দান করেন। আমিন।’
দেশের ক্রীড়া সাংবাদিকদের আরেক সংগঠন বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিএসজেএ) খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকাহত। সংগঠনটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মঙ্গলবার সকালে ইন্তেকাল করেছেন। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নে অসামান্য ভূমিকা রাখেন। তাঁর মৃত্যুতে বিএসজেএ গভীর শোক প্রকাশ করছে এবং তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করছে।’
খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন ক্রিকেটার, ফুটবলারসহ দেশের অন্যান্য ক্রীড়াবিদরা। বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘ইন্না নিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’ এরপর পোস্টে তিনি একটি প্রার্থনার সিম্বল দিয়েছেন। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত লিখেছেন, ‘বিদায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী। আল্লাহ আপনাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুণ, আমিন।’
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের অধিনায়ক লিটন দাস শোক জানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেছেন, ‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াণে গভীরভাবে শোকাহত। জাতির এই শোকের মুহূর্তে তাঁর পরিবার ও স্বজনদের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা।’
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের বাইরে থাকা এবং সাবেক বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে। দীর্ঘ ফেসবুক পোস্টে বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই পোস্টারবয় লিখেছেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আজ সকাল ৬টায় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। এই শোকের মুহূর্তে তাঁর পরিবার ও স্বজনদের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা। তিনি দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ ও অবদান রেখেছেন।আল্লাহ তায়ালা তাঁর রুহের মাগফিরাত দান করুন। সকলের কাছে তাঁর জন্য দোয়া প্রার্থনা করছি।’
বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় অধিনায়ক এবং যার সময়ে বাংলাদেশ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সেমিফাইনাল খেলেছে এবং বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে তিনি মাশরাফি বিন মর্তুজা। সাবেক এই পেসার নিজের ফেসবুক পেজে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে পোস্ট করেছেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানাচ্ছি। কঠিন এই সময়ে তাঁর শোক সন্তপ্ত পরিবার, তাঁর স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষী সবার প্রতি জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা। রাজনীতির পথচলায় দীর্ঘ লড়াইয়ে তাঁর অবদান দেশের মানুষ মনে রাখবে। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। নিশ্চয়ই আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দেবেন।’
জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক এবং দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল নিজের ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘তাঁর (খালেদা জিয়া) প্রয়াণে দেশ হারাল এক দৃঢ় নেতৃত্বের প্রতীককে। মহান আল্লাহ তাঁর রূহের মাগফিরাত দান করুন ও জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন।’
সাবেক নারী ক্রিকেটার জাহানার আলম শোক প্রকাশ করেছেন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে, ‘মহান আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন।’দুইবারের সাফজয়ী নারী ফুটবলার সানজিদা আক্তার খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাঁর দেশপ্রেম ও দেশের মানুষের জন্য সংগ্রাম উজ্জীবিত করে কোটি নারীকে। তিনি বলেছিলেন, বিদেশে আমার কোনো ঠিকানা নেই, এটাই হলো আমার ঠিকানা। দেশেই চিকিৎসা নিবো, দেশেই মারা যাবো।’ সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে, গভীর শোক ও বিনম্র শ্রদ্ধা।’
বাংলাদেশ নারী ফুটবলের পোস্টারগার্ল এবং দুইবারের সাফজয়ী ফুটবলার ঋতুপর্ণা চাকমা। তিনি খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকাহত, ‘বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি। সময়ের উত্থান-পতন, সংগ্রাম এর মধ্যে দিয়েও তাঁর দীর্ঘ উপস্থিতি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি আলাদা অধ্যায়। তাঁর দেশপ্রেম এবং দেশের মানুষের জন্য সংগ্রাম উজ্জীবিত করে কোটি নারীকে।’এছাড়া বাংলাদেশ নারী ফুটবলের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক সাবিনা খাতুনও নিজের ফেসবুক পেজে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।

২০২৫ বিদায় নিচ্ছে। নতুন বছরের ভোর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। তার আগেই স্মৃতির পাতা উল্টালে চোখে পড়ে এক বছরের অম্ল-মধুর সব ঘটনা- উচ্ছ্বাসের হাসি, হতাশার দীর্ঘঃশ্বাস, আর ইতিহাস ছোঁয়ার কিছু দুর্লভ মুহূর্ত।
বাংলাদেশ ফুটবলের আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল আলো হয়ে উঠলেন হামজা চৌধুরী। লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়ানো শুধু একজন ফুটবলারের অভিষেক নয়, যেন নতুন করে স্বপ্ন দেখার সাহস। মাঠে তাঁর উপস্থিতি ফিরিয়ে আনল দেশের নিস্তব্ধ ফুটবলকে। গ্যালারি আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হলো নতুন উন্মাদনা।
নারী ফুটবলে সাবিনা খাতুন ও ঋতুপর্ণাদের ‘কোচ হটাও' বিদ্রোহে উত্তাল সময় পেরিয়েও দলটি থামেনি। সংকটের ভেতর দিয়েই তাঁরা গড়েছেন ইতিহাস। প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের মূলপর্ব নিশ্চিত করে প্রমাণ করেছে, লড়াই শুধু কথায় নয়, খেলাতেও।
ক্রিকেটে বছরজুড়ে চলেছে ওঠানামা। কখনো প্রত্যাশার আলো, কখনো হতাশার ছায়া। এই মিশ্র পারফরম্যান্সের মাঝেই একটি অধ্যায়ের ইতি টানলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্টে নতুন আরেক ইতিহাস।
তবে বছরের শেষটা যে রঙিন হয়ে উঠবে, সে গল্প লিখে দিল জুনিয়র হকির আমিরুল। বিশ্বমঞ্চে তাঁর হাত ধরেই ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিল বাংলাদেশ। বছরের ক্লান্তি, হতাশা, সবকিছুকে ছাপিয়ে এই অর্জন এনে দিল এক টুকরো গর্ব।
এর সঙ্গে যুক্ত হলো নারী কাবাডি বিশ্বকাপে আর ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে পাওয়া পদক। নীরবে, দৃঢ়তায়, বাংলাদেশ প্রমাণ করল সব আলো ক্রিকেটেই সীমাবদ্ধ নয়।
হামজার অপেক্ষার অবসান
৫ মার্চ, ২০২৫ বাংলাদেশ ফুটবলের ক্যালেন্ডারে দিনটি বিশেষ। ইংলিশ লিগের তারকা, লেস্টার সিটির ডিফেন্ডার হামজা চেৌধুরী সেদিন প্রথমবার লাল-সবুজের জার্সি গায়ে নামলেন মাঠে। শিলংয়ে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে জয়ের খুব কাছে গিয়েও শেষ পর্যন্ত পয়েন্ট ভাগাভাগিতে সন্তুষ্ট থাকতে হয় বাংলাদেশকে। কূলে এসে তরী ডোবার মতোই এক অনুভূতি।
অপেক্ষা অবশ্য দীর্ঘ হয়নি। পরের প্রীতি ম্যাচেই নেপালের বিপক্ষে দুর্দান্ত হেডে গোলের খাতা খুললেন হামজা। অল্প সময়েই হয়ে উঠলেন দলের নির্ভরতার নাম। এখন পর্যন্ত সাত ম্যাচে তঁার গোল চারটি। তবে সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত এলো ২২ বছর পর ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ে, যেখানে হামজার উপস্থিতিই দলের দৃঢ় রক্ষণ দেয়াল তৈরি হয়।
হামজার সঙ্গে জাতীয় দলে নতুন করে যুক্ত হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রবাসী ফুটবলার সমিত সোম, ফাহমিদুল ইসলাম, জায়ান হাকিম ও কিউবা মিচেল। তাঁদের আগমনে দলে এসেছে গভীরতা আর নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত।
বাংলাদেশ ফুটবল ইতিহাসে এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলার স্মৃতি ছিল একটাই ১৯৮০ সালে কুয়েতে। দীর্ঘ ৪৫ বছরের অপেক্ষার গেরো খুলেছে ২০২৫ সালে। এই বছরে বাংলাদেশ খেলেছে মোট ১০টি ম্যাচ সাতটি হোম, তিনটি অ্যাওয়ে। জয় ও পরাজয় তিনটি করে, বাকি চারটি ম্যাচ ড্র।
সাবিনাদের বিদ্রোহ
বছরের শুরুতেই ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’ ছিল নারী ফুটবলারদের কোচ হটাও বিদ্রোহ। সাবিনা, সানজিদা, শামসুন্নাহার, ঋতুপর্ণা, মাসুরা, মনিকার মতো তারকা ফুটবলারসহ মোট ১৮ জন সাংবাদিকের কাছে নিজেদের অসন্তুষ্টির কথা জানিয়ে বিবৃতি দেন।
দলের অস্থিরতা ঝেড়ে বছরের মাঝামাঝিতে আফঈদা খন্দকারের নেতৃত্বে এশিয়ান কাপ কোয়ালিফাই করে বাংলাদেশ। সিনিয়রদের পর অনূর্ধ্ব-২০ নারী এশিয়ান কাপেও জায়গা করে বাংলাদেশ।
ফিফার নিষেধাজ্ঞা ও বিএফএল
ক্লাব ফুটবলে ঘটেছিল অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবের ওপর ট্রান্সফার নিষেধাজ্ঞা জারি করে ফিফা। গত মেৌসুমে উজবেক ফুটবলার সারদর জাখোনভের বকেয়া বেতন পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় এই সদ্ধিান্ত জানায় বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বছরের শেষদিকে পেশাদার লিগ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগ (বিপিএল) থেকে Èবাংলাদেশ ফুটবল লিগ' (বিএফএল) হিসেবে নাম পরিবর্তন করা হয়।
ক্রিকেটে মিশ্র পারফরম্যান্স
নিজেদের প্রিয় সংস্করণ ওয়ানডেতেই বছরজুড়ে বেশি অচেনা ছিল বাংলাদেশ দল। বছর শুরু হয়েছিল আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি দিয়ে—যেখানে প্রত্যাশা ছিল নতুন বছরের সূচনা হবে আত্মবিশ্বাসী পারফরম্যান্সে। কিন্তু পাকিস্তানে সেই টুর্নামেন্টে একটি ম্যাচও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। সুযোগ ছিল, প্রস্তুতিও ছিল—ফলটা আসেনি।
পুরো বছরে ওয়ানডে খেলেছে ১১টি। জয় এসেছে মাত্র তিনটিতে, হেরেছে সাত ম্যাচে, একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত। পরিসংখ্যানের এই খসড়া চিত্রই বলে দেয়, কীভাবে নিজেদের প্রিয় ফরম্যাটে পথ হারিয়েছে বাংলাদেশ।
টেস্ট ক্রিকেটে ফলাফল তুলনামূলক ভালো দেখালেও তাতে স্বস্তি পুরোপুরি আসে না। ছয় টেস্টে তিন জয়, দুই হার ও একটি ড্র—সংখ্যার হিসেবে ভারসাম্য থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন। বছরের শুরুতেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হার দিয়ে শুরু, পরের টেস্টে জিতে সিরিজ সমতায় শেষ। জুনে শ্রীলঙ্কা সফরে একটি টেস্ট ড্র, অন্যটিতে হার। বছর শেষ হয়েছে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়ে—তবে প্রতিপক্ষের শক্তি বিবেচনায় সেটিও বড় অর্জন হিসেবে ধরা কঠিন।
টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচের সংখ্যা আর পারফরম্যান্স—দুটোই ছিল চোখে পড়ার মতো। এক বছরে বাংলাদেশ খেলেছে ৩০টি টি-টোয়েন্টি, যা আগে কখনও হয়নি। ১৫টি জয়, ১৪টি হার ও একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত—জয়ের হার ৫১.৭২ শতাংশ। দলীয় ফলাফল ওঠানামায় ভরা হলেও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে উজ্জ্বল ছিলেন একাধিক ক্রিকেটার।
ব্যাটাররা মিলিয়ে করেছেন ২৩টি ফিফটি। এক বছরে সর্বোচ্চ আটটি ফিফটির রেকর্ড গড়েছেন তানজিদ হাসান তামিম। রান করেছেন সর্বোচ্চ ৮১৪, হাঁকিয়েছেন বাংলাদেশের হয়ে এক বছরে সর্বোচ্চ ৪১টি ছক্কা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাকালে ছক্কায় তার ওপরে ছিলেন শুধু ভারতের অভিষেক শর্মা ও পাকিস্তানের সাহিজদা ফারহান। রানেও এগিয়ে কেবল অভিষেক শর্মা ও জিম্বাবুয়ের ব্রায়ান বেনেট।
বোলিংয়ে টি-টোয়েন্টিতে আরেকটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক আসে মোস্তাফিজুর রহমানের হাত ধরে। সাকিব আল হাসানকে ছাড়িয়ে তিনি বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির কীর্তি গড়েন—১৫৮ উইকেট নিয়ে। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে উইকেটের ফিফটি পূরণ করেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন, যা তার উত্থানের ইঙ্গিত দেয়।
বিসিবির নির্বাচন
ক্রিকেট মাঠের বাইরেও বছরটি ছিল অস্থিরতায় ভরা। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করেন বোর্ডের পরিচালকেরা। পদ হারানোর পর দায়িত্ব নেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। অক্টোবরে নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি নিয়মিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান।
তবে তার অধীনে প্রথম বড় ধাক্কা আসে ঘরোয়া ক্রিকেটে। প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ খেলতে অস্বীকৃতি জানায় আটটি ক্লাব—যা দেশের ক্রিকেট কাঠামোর ভেতরের অসন্তোষের চিত্র স্পষ্ট করে।
মুশফিকের শততম টেস্ট
বছরের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত আসে নভেম্বরে। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দেশের ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্ট খেলেন মুশফিকুর রহিম। শুধু ম্যাচ খেলেই থেমে থাকেননি, ব্যাট হাতে তুলে গড়েছেন অভিজাত এক কীর্তি।
প্রথম ইনিংসে ১০৬ রান, দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৩ রানে অপরাজিত—শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করা বিশ্বের মাত্র ১১তম ব্যাটার হিসেবে নিজেকে যুক্ত করেছেন অভিজাত তালিকায়। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এই কীর্তি আলাদা করে জায়গা করে নেয়, একটি মিশ্র বছরের মাঝে হয়ে ওঠে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম।
জুনিয়র হকি বিশ্বকাপে চ্যালেঞ্জার্স ট্রফি
টুর্নামেন্টের আগে তড়িঘড়ি প্রস্তুতি। তিন-চার মাসের জন্য কোচ নিয়োগ, অল্প সময়ের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। দেশের হকিতে এ যেন বহু দিনের চেনা ছবি। সীমাবদ্ধতার এই বৃত্ত ভেঙে বড় স্বপ্ন দেখার সুযোগ খুব কমই আসে। তবু সেই বাস্তবতার ভেতর দাঁড়িয়েই জুনিয়র হকি বিশ্বকাপে নিজেদের গল্পটা লিখে ফেলেছে বাংলাদেশ।
২৪ দলের বিশ্বকাপে ১৭তম হয়ে চ্যালেঞ্জার্স ট্রফি জেতা কেবল পরিসংখ্যান নয়, এটি এক ধরনের প্রতিরোধের ভাষ্য। যেখানে প্রত্যাশা কম, প্রস্তুতি স্বল্প, সেখান থেকেই উঠে এলো বিজয়ের গল্প। ফাইনালে ইউরোপের শক্তিশালী অস্ট্রিয়াকে ৫৩ ব্যবধানে হারিয়ে লাল-সবুজের তরুণরা জানিয়ে দিল, সাহস থাকলে পথ তৈরি হয়।
এই গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন আমিরুল ইসলাম। টুর্নামেন্টজুড়ে যেন অপ্রতিরোধ্য এক নাম। গোলের পর গোল, প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভেঙে দেওয়া ধারাবাহিক আঘাত। সর্বোচ্চ ১৮ গোলের সঙ্গে চারটি হ্যাটট্রিক। সংখ্যাগুলো নিজেরাই কাব্য হয়ে ওঠে। তার পাশে রাকিবুল হাসানসহ আরো কয়েকজন প্রথমবার বিশ্বমঞ্চে পা রেখেই আলো ছড়িয়েছেন, দেখিয়েছেন ভবিষ্যতের সম্ভাবনা।
তবু এই উজ্জ্বলতার পরেও প্রশ্ন থেকে যায় এরপর কী? ট্রফি হাতে নিয়ে ফেরা এই তরুণদের সামনে পথটা কি আরো মসৃণ হবে, নাকি আবারও তারা হারিয়ে যাবে অবহেলা আর অনিশ্চয়তার ভিড়ে? উত্তর জানা নেই কারো।
তার পরও বছরের শেষ প্রানে্ত দঁাড়িয়ে জুনিয়র হকির এই সাফল্য এক টুকরা আশা হয়ে থাকে। মনে করিয়ে দেয়, অল্প প্রস্তুতিতেও ইতিহাস লেখা যায়, যদি প্রতিভা আর দৃঢ়তা একসঙ্গে হঁাটে।
কাবাডি বিশ্বকাপে মেয়েদের ব্রোঞ্জ
মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে থাইল্যান্ডকে ৪০-৩১ পয়েন্টে হারিয়ে সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। প্রথমবার নারী কাবাডি বিশ্বকাপে সে জয়ের পরই ব্রোঞ্জ পদক নিশ্চিত হয়ে যায়∏মেয়েদের বুনো উদযাপন। সুযোগ ছিল ফাইনাল নিশ্চিত করার। তবে সেমিফাইনালে চায়নিজ তাইপের গতি ও কেৌশলের কাছে ২৫-১৮ পয়েন্টের ব্যবধানে হার মানতে হয় স্বাগতিক দলকে। সন্তুষ্ট থাকতে হয় ব্রোঞ্জ পদক নিয়ে।
ঢাকায় এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ
নভেম্বরে ঢাকা হয়েছিল এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল ৩০টি দেশের আর্চাররা। টুর্নামেন্টে ব্যক্তিগত ও দলীয় ইভেন্টে পদক তালিকায় শীর্ষে ছিল ভারত। ছয়টি স্বর্ণ, তিনটি রেৌপ্য ও একটি ব্রোঞ্জ মিলিয়ে ১০টি পদক জিতেছে দেশটি। দুটি স্বর্ণ, চারটি রেৌপ্য ও চারটি ব্রোঞ্জ জেতে দক্ষিণ কোরিয়া। আয়োজক বাংলাদেশ একটি করে রেৌপ্য ও ব্রোঞ্জ জিতেছিল।
খই খই মারমার চমক
সৌদি আরবের রিয়াদে হৈচৈ ফেলে দিলেন রাঙামাটির রাজস্থলীর পাহাড়ি গ্রামের খই খই সাই মারমা। ১৮ বছর বয়সী খই খইয়ের হাতেই বাংলাদেশ টেবিল টেনিসের ইতিহাসে রচিত হয়ে গেল এক নতুন অধ্যায়। ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে জাবেদ আহমেদের সঙ্গে জুটি বঁেধে মিশ্র দ্বৈতে রুপা জিতেছেন খই খই। এই অর্জন বাংলাদেশের টেবিল টেনিস তথা ক্রীড়াঙ্গনেই অনেকটা অপ্রত্যাশিত।
দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে কোনো প্রতিযোগিতায় এটাই বাংলাদেশের প্রথম টেবিল টেনিস পদক। গত ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে নারী এককে সাদিয়া রহমান মেৌ খেলেছিলেন কোয়ার্টার ফাইনালে।
জাতীয় দাবায় হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন নোশিন
জাতীয় মহিলা দাবার মুকুট এবারও নোশিন আনজুমের মাথায়। টানা তৃতীয়বারের মতো তিনি জেতেন এই খেতাব। একাদশ ও শেষ রাউন্ডে ওয়ারসিয়া খুশবুর সঙ্গে ড্র করে শিরোপা নিশ্চিত করেন নোশিন। মাত্র ছয় চালেই ড্রয়ের প্রস্তাব দেন তিনি। খুশবুও তাতে রাজি হন। দেশের মহিলা দাবায় দ্বিতীয় কোনো খেলোয়াড় হিসেবে টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কীর্তি গড়লেন নোশিন আনজুম। ১৯৭৯ সালে জাতীয় মহিলা দাবা শুরু হওয়ার পর রানী হামিদ প্রথম ছয়বার টানা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। পরে ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আবারও জেতেন টানা তিনবার।
২০২৫ তাই শুধু একটি বছর নয়; এটি ছিল সংগ্রাম, বিদ্রোহ, বিদায় আর বিজয়ের এক যেৌথ কাব্য। স্মৃতির পাতায় অম্ল-মধুর স্বাদ রেখে বছরটি বিদায় নেয়, আর সামনে রেখে যায় নতুন ভোরের অপেক্ষা, আরো স্বপ্ন, আরো ইতিহাসের।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া মারা গেছেন। আজ মঙ্গলবার ভোর ৬ টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ক্রীড়াঙ্গনে। শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনসহ (বাফুফে) সব ফেডারেশন। বাফুফে শোকবার্তায় লিখেছে, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন প্রভাবশালী নেত্রী হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা ও মানবতার পক্ষে দৃঢ় কণ্ঠস্বর হিসেবে তাঁর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর রাজনৈতিক জীবন ও ভূমিকা দেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। নেতৃত্ব ও সংগ্রামের যে দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করেছেন, তা বহু মানুষের স্মৃতিতে অম্লান থাকবে। তাঁর মৃত্যু বাংলাদেশের জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি।’
তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া একজন ক্রীড়ানুরাগী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল, সিনিয়র সহ-সভাপতি ইমরুল হাসান, সহ-সভাপতিবৃন্দ, নির্বাহী কমিটির সদস্যগণ, সাধারণ সম্পাদক, বাফুফের সকল স্থায়ী কমিটি এবং সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছেন।
একই সঙ্গে আজকের দিনের ফুটবল ফেডারেশনের আওতাধীন যতগুলো খেলা ছিল সবগুলো খেলা স্থগিত করা হয়েছে। আজ বাংলাদেশ ফেডারেশন কাপে দুটি ম্যাচ ছিল। দুপুর আড়াইটায় পিডব্লিউডি বনাম ব্রাদার্স ইউনিয়ন এবং রহমতগঞ্জ বনাম ঢাকা আবাহনীর খেলা স্থগিত করা হয়েছে। নারী ফুটবল লিগেও আজ ছিল তিনটি ম্যাচ। তবে এই ম্যাচগুলোও স্থগিত করা হয়েছে। নোয়াখালীতে হওয়ার কথা ছিল অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল। সেটিও স্থগিত করা হয়েছে। বাফুফে পরবর্তীতে এই খেলাগুলোর সূচি জানাবে।

গত ৫ নভেম্বর বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে গোড়ালির চোটে পড়েছিলেন। দীর্ঘ বিরতির পর অবশেষে মাঠে ফিরলেন আশরাফ হাকিমি। পিএসজির এই রাইট-ব্যাকের ফেরার দিন বড় জয় পেয়েছে মরক্কো।
গতকাল রাতে আফ্রিকা কাপ অব নেশন্সে (আফকন) রাবাতের উত্তাল প্রিন্স মৌলায় আবদেল্লাহ স্টেডিয়ামে জাম্বিয়াকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে মরক্কো। জোড়া গোল করেছেন অলিম্পিয়াকোসের ফরোয়ার্ড আইয়ুব এল কাবি। এরমধ্যে একটি ছিল চোখধাঁধানো বাইসাইকেল কিকে গোল। মরক্কোর অন্য গোলটি করেন রিয়াল মাদ্রিদের উইঙ্গার ব্রাহিম দিয়াজ।
প্রতিযোগিতার এবারের আসরের স্বাগতিক মরক্কো গ্রুপ ‘এ’-এর চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করল। তিন ম্যাচে দুই জয় ও এক ড্রয়ে ৭ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে মরক্কো। তিন ম্যাচে তিন ড্রয়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে রাউন্ড অব সিক্সটিনের টিকিট কেটেছে এই গ্রুপের মালি।
ম্যাচের নবম মিনিটেই গোলের খাতা খোলেন এল কাবি। কর্নার থেকে আজেদ্দিন উনাহি বল ভাসিয়ে দিলে দারুণ ডাইভিং হেডে সেটি জালে পাঠান তিনি, জাম্বিয়ার গোলরক্ষক উইলার্ড মওয়ানজার চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না।
আরও পড়ুন
| কামব্যাক পুরস্কার জিতে রোনালদোর প্রশংসা পগবার |
|
২৭ মিনিটে দুর্দান্ত এক গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ব্রাহিম দিয়াজ। বাঁ দিক থেকে আবদে এজালজৌলির ক্রস এল কাবিকে এড়িয়ে গেলে বক্সের ভেতর থেকে নিখুঁত শটে গোল করেন রিয়াল মাদ্রিদের তারকা।
শুরুর একাদশে রিয়াল বেতিসের উইঙ্গার আব্দে এজালজৌলির অন্তর্ভুক্তি মরক্কোর আক্রমণভাগে আলাদা মাত্রা যোগ করে। বার্সেলোনায় দুই বছর কাটানো ২৪ বছর বয়সী এই ফুটবলারের সঙ্গে রিয়াল মাদ্রিদের দিয়াজের বোঝাপড়া ছিল দারুণ।
বিরতির পাঁচ মিনিট পরই ব্যবধান ৩-০ করেন এল কাবি। কোমোরোসের বিপক্ষে টুর্নামেন্টের শুরুর ম্যাচে বাইসাইকেল কিকের পর এবারও তিনি করেন এক অবিশ্বাস্য অ্যাক্রোবেটিক গোল। পেছনের দিকে সরে গিয়ে উনাহির ক্রসে লাফিয়ে উঠে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি, আর তাতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে গোটা রাবাত।
৬৪ মিনিটে নুসাইর মাজরাউইয়ের বদলি হিসেবে আশরাফ হাকিমি মাঠে নামার সময় পুরো গ্যালারি করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে। মাঠে নামার পরই প্রাণবন্ত দেখায় তাকে । হাকিমির ফেরা মরক্কো কোচ ওয়ালিদ রেগরাগুইয়ের জন্য বড় স্বস্তি বটে।
গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শেষ ষোলোতে ওঠা মরক্কো ৪ জানুয়ারি রাবাতে গ্রুপ ‘সি’, ‘ডি’ বা ‘ই’-এর সেরা তৃতীয় দলের একটির মুখোমুখি হবে।
প্রতিযোগিতার অন্য ম্যাচে কোমোরোসের বিপক্ষে বল দখলে আধিপত্য দেখালেও শেষ দিকে আমাদু হাইদারার বিতর্কিত লাল কার্ডে কিছুটা চাপের মুখে পড়ে মালি। শেষ পর্যন্ত পাঁচ পয়েন্ট নিয়ে তারা পরের রাউন্ডে ওঠে। দুই পয়েন্ট পাওয়া কোমোরোস তৃতীয় স্থানে থেকে এখন অপেক্ষায়।
এর আগে গ্রুপ ‘বি’-তে মিশর ০-০ গোলে ড্র করে অ্যাঙ্গোলার বিপক্ষে। এই ড্রয়ের পরও অবশ্য গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করল মোহাম্মদ সালাহরা। একই গ্রুপে দক্ষিণ আফ্রিকা ৩-২ গোলে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে শেষ ষোলোতে জায়গা নিশ্চিত করে।

‘স্বয়ং ঈশ্বর অনুরোধ করলেও আমি আমার খেলানোর কৌশল পরিবর্তন করবো না’—এমনটাই ঘোষণা দিয়েছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ম্যানেজার রুবেন আমোরিম। নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকে ২০২৪–২৫ মৌসুম এবং নতুন বছরেও বেশ সমালোচনার শিকার হন পর্তুগিজ কোচ।
রুবেন আমোরিম অবশ্য নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, এখনই সঠিক সময় ম্যান ইউনাইটেডের ফরমেশন পরিবর্তনের। তবে তিনি জানিয়েছেন, গণমাধ্যমের চাপে এমনটা করছেন না তিনি। বরং আগে যদি সেটি আগে করতেন, তাহলে আর ফিরে আসার সুযোগ থাকত না রেড ডেভিলসদের।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম ১২ মাস ৩-৪-৩ ফরমেশনে খেলা পরিচালনা করেন আমোরিম। গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে ১৫তম স্থানে থেকে যাত্রা শেষ হয় তাদের।
২০২৫–২৬ মৌসুমে ভঙ্গুরদশা কাটিয়ে সফলতার পথে ম্যান ইউনাইটেড। বর্তমানে তারা প্রিমিয়ার লিগে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। এই ম্যাচে তিন পয়েন্ট পেলে শীর্ষ চারে উঠে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। লিগে আসন্ন ম্যাচে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে পাচ্ছে না ইউনাইটেড। ব্রায়ান এমবেউমো ও আমাদ দিয়ালো আফ্রিকা কাপ অব নেশনসে ব্যস্ত সময় পার করছে। অধিনায়ক ব্রুনো ফার্নান্দেসও চোটে ছিটকে পড়েছেন।
বক্সিং ডেতে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের বিপক্ষে ১–০ গোলের জয়ে ৪–২–৩–১ ফরমেশনে খেলেছিল ইউনাইটেড। আমোরিম আশা করছেন, এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে দল নতুন এই ফরমেশনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠবে।
আমোরিম বলেন,
“গত মৌসুমে যখন আমি এখানে (ম্যান ইউনাইটেড) আসি, তখন বুঝেছিলাম—এই সিস্টেমে ভালো খেলানোর মতো খেলোয়াড় হয়তো আমার হাতে নেই। সেটি ছিল একটি প্রক্রিয়ার শুরুর ধাপ।”
তিনি আরও বলেন,
“আমরা তখন একটি পরিচয় গড়ে তুলতে চাইছিলাম। আজ পরিস্থিতি ভিন্ন। আমাদের হাতে খুব বেশি খেলোয়াড় নেই, তাই মানিয়ে নিতে হচ্ছে এবং খেলোয়াড়দের বোঝাতে হচ্ছে—কেন আমরা এই পরিবর্তন করছি। এটা আপনাদের (গণমাধ্যম) বা সমর্থকদের চাপে নয়।”
পর্তুগিজ কোচ বলেন,
“আপনারা যখন বারবার সিস্টেম বদলানোর কথা বলছিলেন, তখন আমি পরিবর্তন করতে পারিনি। কারণ খেলোয়াড়রা ভাবত—আমি আপনাদের চাপে বদলাচ্ছি। আমরা যখন আমাদের সিস্টেমে ভালো খেলছি, ঠিক সেই সময়টাই পরিবর্তনের সঠিক মুহূর্ত।”