বিপিএলের চট্রগ্রাম পর্ব শুরুর আগে খুলনা টাইগার্স স্কোয়াডে যোগ দিচ্ছেন নতুন বিদেশী ক্রিকেটার। দলটিতে নাম লিখিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকান বাঁহাতি পেসার ওয়েইন পারনেল।
বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে চেনা মুখ হলেও এই প্রথম বিপিএল মাতাবেন পারনেল।
৩৪ বছর বয়সী এই এই ক্রিকেটার দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দলের হয়ে ৫৬টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ৫৯টি উইকেট শিকার করেছেন। শেষ ম্যাচ গত মার্চে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে৷
সব মিলিয়ে ২৮৮টি স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি খেলেছেন পারনেল। ৮.০৭ ইকোনমি রেটে উইকেট নিয়েছেন ৩০৫টি। সেরা বোলিং ফিগার ২২ রানে ৫ উইকেট।
ব্যাট হাতেও অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার খারাপ না। ১২১.৭১ স্ট্রাইক রেটে এখন পর্যন্ত করেছেন দুই হাজারের বেশি রান।
বিপিএলে পারনেলের দল খুলনা সাত ম্যাচে চার জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে আছে পঞ্চম স্থানে।
ধীরগতির উইকেটে আগের ম্যাচেও রান তাড়ায় খেলেছিলেন দারুণ এক ইনিংস। তবে ম্যাচ শেষ করে আসতে পারেননি। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আরেকটি ফিফটি করা নাজমুল হোসেন শান্ত আশা জাগিয়েছিলেন শতকের। কিন্তু পারেননি। তবে এই দফায় বাংলাদেশ অবশ্য জয়ের দেখা পেয়েছে। এরপরও তাই আক্ষেপ রয়ে গেছে বাংলাদেশ অধিনায়কের। শান্ত মনে করেন, তার আরও লম্বা সময় ব্যাট করা উচিত ছিল।
অবশ্য একই কথা প্রথম ম্যাচের পরও বলেছিলেন শান্ত। সেদিন তার বিদায়ের পরই ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ইনিংস। শারজাহতে নতুন ব্যাটারদের জন্য রান করাটা কঠিন বলেই সেট ব্যাটারদের ওপর দায়িত্ব থাকে বেশি। ৭৭ রান করা শান্ত আউট হওয়ায় তাই এক পর্যায়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ২৫২ রানের স্কোর পেয়ে ম্যাচও জেতে ৬৮ রানে।
দলের জয়ে খুশি হলেও তাই ম্যাচের পর শান্ত নিজের ইনিংসের কমতি তুলে ধরেন। “একটু ভালো লাগছে কিন্তু তবুও কিছুটা আক্ষেপও আছে। আমাদের পরের ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সত্যি বলতে আমি খুশি নই। স্পিনের বিপক্ষে খেলাটা এই উইকেটে কঠিন ছিল, আর সেই কারণে সম্ভবত আমাকে আরেকতু একটু বেশি সময় ব্যাট করতে হত।”
শান্তর আক্ষেপ আরও দীর্ঘ হতে পারত, যদি না ১৮৪ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর সপ্তম উইকেটে ৪৬ রান করতেন অভিষিক্ত কিপার-ব্যাটার জাকের আলি অনিক ও স্পিনার নাসুম আহমেদ, যিনি এই ম্যাচ দিয়েই এসেছেন একাদশে। বিশেষ করে জাকের দারুণ ফিনিশিং দেন ৩৭ রানের অপরাজিত ইনিংসে। ব্যাটিংয়ের পর বল হাতেও ৩ উইকেট নিয়ে জয়ে অবদান রাখেন নাসুম।
নিজ নিজ ভূমিকায় এই দুজনের অবদান তাই প্রশংসা পেল অধিনায়কের। “মিরাজ ও নাসুম যেভাবে বোলিং করেছে, তা প্রশংসার যোগ্য। আর নতুন বলে আমরা যেভাবে শুরু করেছি, তাসকিং ফিরিয়ে দিল গুরবাজকে। সে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটার। তারা (জাকের-নাসুম) যেভাবে ফিনিশিং দিয়েছে, সেটা আমাদের মোমেন্টাম এনে দিয়েছে। জাকের এবং লোয়ার মিডল অর্ডারের ব্যাটারদের কাছে থেকে আমি এমনটাই চাই।”
আর আফগানিস্তান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদি বলেছেন, জাকের ও নাসুমের ওই জুটিই তাদের সর্বনাশ করেছে। “শেষ পাঁচ ওভারে তারা ৪০ রান (৫২) করেছে। এটা একটা ব্যবহার করা উইকেট ছিল এবং এখানে পরে ব্যাটিং করা কঠিন। আমাদের প্রথম ১০ ওভার ভালো ছিল না। (বোলিংয়ে) শেষ পাঁচ ওভার আমাদের জন্য খরুচে ছিল। ব্যাটিংয়ে আমরা টানা কিছু উইকেট হারিয়েছি। কিছু জুটি গড়া উচিত ছিল।”
সব ফরম্যাট মিলিয়ে হারের বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়া বাংলাদেশ প্রথম ওয়ানডেতে যেভাবে হেরে যায়, সেটা সামলে ওঠাই ছিল এই ম্যাচের বড় চ্যালেঞ্জ। ব্যাটিংয়ে সেই কাজটা ভালোভাবেই করলেন তারা, সামনে থেকে যার নেতৃত্ব দিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। লড়াই করার মত স্কোর নিয়ে রহমাত শাহর প্রতিরোধ সামলে বোলাররা এরপর বাংলাদেশকে এনে দিলেন স্বস্তির সুবাতাস বইয়ে দেওয়া এক জয়। সিরিজেও আসল সমতা।
শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৬২ রানে জিতেছে বাংলাদেশ। ৭ উইকেটে ২৫২ রান করার পর আফগানদের ১৮৪ রানে আটকে দিয়েছে সফরকারীরা। তিন ম্যাচের সিরিজে এখন সমতা ১-১।
আরও পড়ুন
সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়ে আগে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে নাসুম |
প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তান ২৩৫ রান নিয়েই পেয়েছিল বড় জয়। একই উইকেটে খেলা হওয়ায় তাই বাংলাদেশের ২৫০ প্লাস স্কোর তাই বোলারদের ভালো মঞ্চ দেয় লড়াই করার জন্য। তৃতীয় ওভারে শেষ বলে আফগানিস্তানের প্রতিভাবান ওপেনার সেদিকুল্লাহ আটালকে দারুণ এই সুইং করে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে পরাস্ত করলেও অল্পের জন্য সাফল্য পাননি শরিফুল।
পরের ওভারে ব্রেকথ্রু এনে দেন আরেক পেসার তাসকিন আহমেদ। অফট্যাম্পের বাইরে হলে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। রহমত শাহকে এরপর মেডেন নেওয়া এক ওভারে বেশ চাপে ফেলে দেন তাসকিন। দুইবার উইকেটের দেখা পাননি অল্পের জন্য।
ধীরে ধীরে এগিয়ে যাওয়া আফগানিস্তানের ওপর চাপ বাড়ানোর ভালো সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। তবে মেহেদি হাসান মিরাজের বলে রহমতের ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হন অভিষিক্ত কিপার জাকের আলি অনিক।
আরও পড়ুন
শান্তর ফিফটির পর জাকেরের ক্যামিওতে বাংলাদেশের লড়াকু স্কোর |
ক্রমেই জমে ওঠা আটাল ও রহমতের জুটি আফগান শিবিরে জাগায়। বড় শটও দুজন খেলেন কিছু। এর মধ্যে ছিল মুস্তাফিজুর রহমানের জোড় বাউন্ডারির ওভার। আক্রমণে এসে প্রথম বলেই উইকেটের দেখা পান এই ম্যাচ দিয়েই একাদশে আসা স্পিনার নাসুম আহমেদ। সুইপ করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন ৩৯ রান করা আটাল। ওভারটি পরে মেডেন নেন নাসুম।
এরপর তিনি ও অন্যপ্রান্তে মাহমুদউল্লাহ মিলে টানা কয়েকটি ওভারে কমিয়ে দেন রানের গতি। তাতে বাড়ে চাপ। সেটা সরাতে গিয়ে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে বড় শট খেলতে চেয়েছিলেন হাশমতউল্লাহ শহিদি। তবে স্ট্যাম্পিংয়ের সুযোগ নষ্ট করেন জাকের।
অন্যপ্রান্তে সাবলীল ব্যাটিংয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩০তম ফিফটির দেখা পান রহমত। আগের ম্যাচে পঞ্চাশ করা শহিদি এই ম্যাচে শুরু থেকেই ছিলেন না ছন্দে। মুস্তাফিজুর রহমানের শিকার হওয়ার আগে ৪০ বলে করতে পারেন মাত্র ১৭ রান।
এর ঠিক পরই দারুণ এক ডেলিভারিতে আজমতউল্লাহ ওমারজাইকে চমকে দিয়ে বোল্ড করেন নাসুম। সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগে ভুল বোঝাবুঝিতে রান-আউট হয়ে যান রহমত। শেষ হয় তার ৫২ রানের ইনিংস।
২ উইকেটে ১১৮ থেকে স্কোর ৫ উইকেটে ১১৯ হয়ে যাওয়া আফগানিস্তানকে এরপর ম্যাচে সেভাবে ফেরার আর সুযোগই দেননি বাংলাদেশের বোলাররা। শুরুটা পেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি গুলবাদাইন নাইব ও মোহাম্মদ নবিরা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে শেষ পর্যন্ত দুইশর আগেই গুটিয়ে যায়। ২৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার নাসুম।
বাংলাদেশের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এই জয়ের ভিত বলা যায় রচনা করেছিলেন ব্যাটাররাই। কারণ, ব্যাটিংয়ের জন্য কিছুটা চ্যালেঞ্জিং এই উইকেটে ভালো একটা স্কোর যে বোলারদের দেন তারা। এর কৃতিত্ব পেতেই পারেন টপ অর্ডার ব্যাটাররা। ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ১৭ বলে ২২ রানে বিদায় নেওয়ার পর অভিজ্ঞ সৌম্য সরকার ও নাজমুল হাসান শান্ত মিলে গড়ে তোলেন ফিফটি জুটি।
আরও পড়ুন
এনসিএলে অমিত হাসানের সেঞ্চুরি |
দারুণ কিছু শট খেলা সৌম্যর কাছ থেকে যখন দল বড় ইনিংসের আশায়, তখনই রশিদ খানের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন তিনি, যা রিভিউ নিলেই তিনি বেঁচে যেতেন। এরপর ইনিংস একাই টেনে শান্ত। মেহেদি হাসান মিরাজ মাঝে কিছুটা সঙ্গ দিলেও দুই ভরসা তাওহীদ হৃদয় ও অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ হন ব্যর্থ।
৭৭ রান করা শান্তর বিদায়ের পর তাই এক পর্যায়ে ২২০ রান করাটাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশের জন্য। তবে জাকের ও নাসুমের মহাগুরুত্বপূর্ণ ৪৬ রানের সপ্তম উইকেট জুটি দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করে।
নাসুম ২৫ রানে আউট হলেও শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন জাকের। ফজলহক ফারুকিকে তিন ছক্কা মেরে খেলেন ২৭ বলের ৩৭ রানের মনে রাখার মত এক ইনিংস। শেষ পর্যন্ত এই ইনিংস জয়ে রাখে বড় ভূমিকা।
২ দিন আগে
২ দিন আগে
৩ দিন আগে
৩ দিন আগে
৩ দিন আগে
৬ দিন আগে
৭ দিন আগে
৮ দিন আগে
৮ দিন আগে
১৯ দিন আগে