
টেস্ট ক্রিকেটে চা বিরতির আগে সাকিব আল হাসান একাই করেছেন প্রায় ৩০ ওভার, শেষ কবে এমনটা দেখা গেছে? উত্তর খুঁজতে বেগ পাবারই কথা। কাউন্টিতে সারের হয়ে নিজের অভিষেক ম্যাচের প্রথম দিন ঠিক সেটাই দেখা গেল। সমারসেটের বিপক্ষে ম্যাচের প্রথম দিনে দলের প্রায় এক তৃতীয়াংশ ওভারই করলেন বাংলাদেশ অলরাউন্ডার। আর শেষ সেশনের তিন উইকেট নিয়ে হলেন দলের সেরা বোলারও।
ইংলিশ কন্ডিশনে স্পিনারদের আধিপত্য বরাবরই কম৷ ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের আগে মাত্র এক ম্যাচের জন্য সারের সাকিবকে মরিয়া হয়ে নেওয়ার মূল কারণ অবশ্য সেই স্পিনই। এই ম্যাচে দলটির একমাত্র স্বীকৃত স্পিনার তিনিই৷ আর সেটার বহিঃপ্রকাশ ঘটে প্রথম ঘন্টাতেই।
মাত্র ১১তম ওভারেই সাকিবকে আক্রমণে আনা হয়। সেই ওভারে চারটি ডট সহ দেন তিন রান। পরের ওভারে একটি বাউন্ডারি সহ হজম করেন ৭ রান। নিজের প্রথম পাঁচ ওভারে ২০ রান দেওয়া সাকিব পরের দুই ওভারে চেপে ধরেন ব্যাটারদের। রান বের করার কোনো সুযোগ না দিয়ে উপহার দেন টানা দুটি মেডেন ওভার।
আরও পড়ুন: নিশাঙ্কার সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডকে ধরাশায়ী করল শ্রীলঙ্কা
টানা স্পেলে করা অষ্টম ওভারে সাকিব তিন সিঙ্গেলসে দেন তিন রান। পরের ওভারে নেন আরেকটি মেডেন। দশম ওভারে কিছুটা খরুচে ছিলেন, আসে ছয় রান। পরের ওভার থেকে আসেনি কোনো রান।
প্রথম স্পেল শেষের পর সাকিবের দ্বিতীয় স্পেল শুরু হয় মাঝে দুই ওভার (২৯ ও ৩০তম) বাদেই। ব্যক্তিগত দ্বাদশ ওভারে দেন মোটে এক রান। ১৩তম ওভারে ফের মেডেন আসে সাকিবের কাছ থেকে। পরের দুই ওভারে দেন চার রান। বাংলাদেশ অলরাউন্ডারের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ওভারটি আসে পরেরটিতেই। পরপর দুই বলে চার মারেন টম অ্যাবেল। সেই ওভার থেকে আসে ৯ রান।
পরের কয়েকটি ওভারে আঁটসাঁট বোলিংয়ের পর শেষ পর্যন্ত নিজের ২২তম ওভারে গিয়ে উইকেটের দেখা পান সাকিব। ক্লিন বোল্ড করেন ৪৯ রান করা অ্যাবেলকে। এই ওভারটিও হয় মেডেন। বাংলাদেশ তারকার পরবর্তী ওভারের চিত্রটাও ছিল একই।
চা বিরতির আগ পর্যন্ত এভাবেই একপ্রান্ত ধরে সাকিবকে দিয়ে বোলিং করায় সারে। ২৮ ওভারে ৭ মেডেন সহ ১ উইকেট নিতে গুনেন ৭৯ রান। ইকোনমি রেট মাত্র ২.৮২। প্রথম দুই সেশনে বল হাতে ব্যস্ত সময় পার করা সাকিব শেষ সেশনে বোলিংয়ে আসেন একদম শেষ বেলায়।

প্রথম দুই ওভারে দেন দশ রান। পরের ওভারে পান দ্বিতীয় উইকেটের দেখা। বড় শট খেলতে গিয়ে লাইন মিস করা ক্যাসি অ্যালড্রিজকে বোল্ড করেন ১৫ রানে। ক্রিজে গিয়ে সাকিবকে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করা ক্রেইগ ওভারটন একটি চার মারলেও সুবিধা করতে পারেননি। স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হন ওই ওভারেই।
এরপর দিনের শেষ ওভারে রান্ডেলকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে সমারসেটের ইনিংসের ইতি টানেন সাকিবই। ৫ উইকেটে ৩০৫ থেকে মাত্র ১২ রানে শেষ পাঁচ উইকেট হারিয়েছে দলটি।
তাতে প্রথম ইনিংসে সাকিবের ফিগারটা বেশ ভালোই দাঁড়িয়ে গেছে : ৩৩.৪-৭-৯৭-৪।
সমারসেট প্রথম ইনিংসে ৯৫.৪ ওভারে করেছে ৩১৭ রান। দলীয় সর্বোচ্চ ১৩২ রান করে শেষ বেলায় আউট হয়েছেন টম ব্যান্টন।
No posts available.



৩১ অক্টোবর ২০২৫, ৬:০৮ পিএম


৩১ অক্টোবর ২০২৫, ৫:১৪ পিএম



৩১ অক্টোবর ২০২৫, ৩:৫১ পিএম


অক্টোবর সদ্য বিদায় নিয়েছে। নভেম্বরের শুরু—শীতের নিঃশ্বাসে জমে গেছে শহর। মাসের প্রথম সপ্তাহ। ছেলেটার ঠিক মনে নেই দিন-তারিখ, এমনকি বারও। শুধু এটুকু জানে—সেদিনের রাতটা ছিল হিমশীতল, নিঃশব্দ, জমে যাওয়া এক শহরের বুকের মতো নিস্তব্ধ।
পায়রা, সীগাল, রবিন—সবাই ঘুমিয়ে গভীর শীতনিদ্রায়। কাতালানদের এই নগর এখন বরফে মোড়া স্বপ্নপুরী।
হঠাৎ একটুখানি শব্দ—একটা ছোট্ট ইঁদুরের পায়চারি। ছেলেটার ঘুম ভাঙে তাতে। অন্ধকার ঘরের কোণে তাকিয়ে ভাবতে থাকে—ও ইঁদুরটাও কি তার মতোই বাঁচার লড়াইয়ে, খাবারের খোঁজে, টিকে থাকার সংগ্রামে? ভাবতে ভাবতে কেমন যেন ভারী হয়ে ওঠে বুকটা।
রাতের এই নিস্তব্ধতায় জেগে ওঠা মানেই এক অনিবার্য বিপদ—চিন্তা। চিন্তার দল মিছিল নামায় ধ্যানের রাজপথে। কৈফিয়ত চায়—আজ কোথায় দাঁড়িয়ে তুমি? কেন এসেছে এত দূরে? কোথায় হারিয়েছে পুরোনো পরিচিত মুখগুলো? অতীত আর বর্তমানের হিসাব মিলাতে মিলাতে হারিয়ে যায় সে এক অদ্ভুত মোহে।
জীবনের এ ধারা-ওধারা ভাবতে ছেলেটার চোখ পড়ে দূরের পাইন গাছে। পাতায় জমেছে বরফ, ভারে নুয়ে পড়েছে শাখা। একসময় যে পাতাগুলো ছিল চিরসবুজ, আজ তারা হারিয়েছে প্রাকৃতিক রূপ। ছেলেটা ভাবে—তার জীবনও কি এমনই হয়ে গেছে? বরফে ঢেকে যাওয়া, রঙহীন, পরিচয়হীন এক অস্তিত্ব?
 
                        নতুন দেশ। অচেনা ভাষা। অপরিচিত মানুষ। দিনের শেষে একাকীত্ব তাকে চেপে ধরে। সুযোগ পেলেই সে আড়াল খোঁজে—ওয়াশরুমে গিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে কাঁদে। চোখের জল যেন ভাষাহীন যন্ত্রণা। রাতের ঘুমও আজকাল বড় অপরিচিত।
আর আজ—যে ইঁদুরটা হঠাৎ ঘুম ভাঙিয়ে দিল, যে পাইন পাতায় বরফ জমেছে—তারা যেন টাইম ট্রাভেলের দরজা খুলে দিল তার সামনে।
শান্ত ছবির মতো রোজারিও শহরটা কেমন আছে? মা সেলিয়া মারিয়া কুচ্চিটিনি এখনও তার জন্য প্রিয় ‘এমপানাদা’ নিয়ে অপেক্ষা করেন। কেমন আছে আন্তোনেলা রোকুজ্জো। ড্রিভলিং কিংবা গোলের পর উচ্ছ্বাসে হারিয়ে যাওয়া মানুষটাকে যে তার ভীষণ মনে পড়ে।
চিন্তার জগত অস্তমিত হতেই চোখের পাতাজোড়া এক হয়। শুরু হয় নতুন ভোর, নতুন জীবন। তিনি জানেন, যে কাতালুনিয়া শহরে তার আগমন, সেখানে ফুটবল শুধু খেলা নয়, জীবনযাপন। বার্সেলোনার লা মাসিয়া নামের এক জাদুঘরে ঠাঁই হয়েছে তার, যেখানে স্বপ্নকে বাস্তবে গড়া হয়।
সেই স্বপ্নের পথে পা বাড়িয়ে, লিওনেল মেসি হয়ে ওঠেন বিশ্ব সমাধৃত। লা মাসিয়া থেকে মূল দলে, লা লিগা, চ্যাম্পিয়নস লিগ—আরও কতশত শিরোপা ট্রফি ধরা দিয়েছে তার হাতে। আর্জেন্টিনার জার্সিতেও হয়েছে দুঃখ মোচন। ২০০৬ থেকে ২০১৮-এ সময়ে চারটি বিশ্বকাপে ব্যর্থ হওয়ার পর ২০২২ সালে কাতারে বিশ্বকাপ ট্রফিতে চুমু আঁকেন মেসি। ৮ বার ব্যালন ডি’অর, ক্লাব ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে ৮৭২ গোল—সবকিছু মিলিয়ে লিওনেল মেসি যেন এক জীবন্ত কিংবদন্তি, ফুটবলের দূত।
মেসির মতো যাপিত জীবন বয়ে বেড়ানো একজন আছেন ক্রিকেটে। যার গল্পটা একই রকম না হলেও একপ্রান্তে গিয়ে ঠেকেছেন দু’জন। তিনি ভারত নারী দলের ব্যাটসম্যান জেমিমাহ রদ্রিগেজ। পরিশ্রমের বিপরীতে হতাশা-গ্লানি হয়ে ওঠেছিল সম্ভল। কান্নায় ভিজে যেত তার বালিশ। একেকটি রাত হয়ে ওঠেছিল হাজার রজনীর সমান। সেই জেমিমাহ সফল হয়েছেন। সৃষ্টিকর্তা যেভাবে মেসিকে ভাঙ্গা-গড়া থেকে উঠিয়ে সম্মান দিয়েছেন, ভারতীয় ব্যাটারও তাঁরই দেখানো পথে।
 
                        বৃহস্পতিবার নাভি মুম্বাইয়ে অনিন্দ্য সুন্দর ইনিংস উপহার দিয়েছেন জেমিমাহ। অপরাজিত ১২৭ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। পুরো বিশ্বকাপে জোয়ার-ভাটার মধ্য দিয়ে থাকা জেমিমাহ বুঝিয়ে দিয়েছেন, পরিশ্রম, একাগ্রতা, নিবেদন, সততা থাকলে সৃষ্টিকর্তা একদিন মুখ তুলে তাকাবেন, বিজয় মালা পরাবেন।
সেটি হয়েছে গতকাল। ২২ গজে সুনিপুণ দক্ষতায় তুলির আঁচড় চালিয়েছেন। একটু দ্রুতই চলেছে তাঁর তুলিটি। তবে জেমিমাহকে চিনতে মোটেও ভুল করেননি দর্শকরা। তিনি মাঠে নামলেন, খেললেন, হাসলেন, ভুল করলেন। আবার জেগে উঠলেন। চক্রের মতো ঘুরতে থাকলেন। শেষপর্যন্ত শিরদাঁড়া উচু করে মাঠ ছাড়লেন।
জেমিমাহর এই গল্পের আদোপ্রান্তে রয়েছে নিরবতা, রয়েছে দুঃখ, গ্লানি, হতাশা ও বাদ পড়ার বিচ্ছিরি কাহিনি। তবে তিনি দমে যাননি। নিরবে প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন মেসির মতো।
মেসির যেখানে শেষ, জেমিমাহর সেখানে শুরু:
আর্জেন্টাইন মহাতারকা ক্যারিয়ারের অন্তিমলগ্নে। বয়স ৩৮। হয়তো ২০২৬ বিশ্বকাপের পর বুট জোড়া তুলে রাখবেন। সেখানে ভারতের নারী দলের ব্যাটসম্যান জেমিমাহর কেবল শুরু। বয়স সবে ২৫। ক্যারিয়ারের দাপুটে সকাল। ভারতকে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনালে তুলেছেন মিডল-অর্ডার এই ব্যাটসম্যান। বৃহস্পতিবার তাঁর ইনিংসে ফাইনালে ভারত।
এদিন রদ্রিগেজ তিনে ব্যাটিংয়ে নেমে টিকে থাকেন শেষ পর্যন্ত। বার দুয়েক বিপদে পড়লেও শান্ত-ক্ষুরদার মেধায় সবই সামাল দেন। দলকে নিয়ে যান জয় বন্দরে। তার ব্যাটে ভর করে ছেলে-মেয়েদের ওয়ানডের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জয় পেয়েছে ভারত। ওয়ানডেতে ৩৩৮ রান তাড়া করে জয় তোলার কথা বিশ্বের কেউ যেখানে কল্পনা করতে পারতো না, সেটা করে দেখান জেমিমাহ।
 
                        নীরব প্রার্থনা:
পুরো পৃথিবী একদিকে রেখে স্পেনে পাড়ি জমিয়েছিলেন মেসি। শারীরিক অসুস্থতা—গ্রোথ হরমোনের ঘাটতি—যা আর্জেন্টাইন সুপারস্টারকে চ্যালেঞ্জে ফেলেছিল। সেখান থেকে উৎরাতে প্রতিরাতে ঈশ্বরের শরনাপন্ন হতেন মেসি। কান্নাভেজা কন্ঠে ফরিয়াদ করতেন—“ঈশ্বর, সব সহজ করে দাও।” চুপ থেকে চেষ্টা চালিয়ে যেতেন। একা থাকা, সবার চেয়ে আলাদা থাকা ছেলেটা একদিন মন জয় করলেন বিশ্বের।
জেমিমাহর জীবনে যেমনটা হয়েছে, তার কণ্ঠে—
‘আমি প্রতিদিন কেঁদেছি, উদ্বেগে ভুগেছি। প্রতিদিন নিজেকে সামলাতে হয়েছে, ঈশ্বরই আমাকে এগিয়ে নিয়েছেন। গত বছর আমাকে বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। তখনো আমি ফর্মে ছিলাম, কিন্তু নানা কিছু ঘটছিল। আমার চারপাশে অসাধারণ মানুষ ছিল, যারা আমাকে সহায়তা করেছে।’
স্থির থাকো, ঈশ্বর তোমাকে সাহায্য করবেন:
লিওনেল মেসি যেমন বলেছিলেন, ‘সফলতা সহজে আসে না। প্রতিদিন ছোট ছোট কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই বড় লক্ষ্য অর্জন করা যায়।’ যে আর্জেন্টাইন জাদুকর হেঁটেছিলেন, তা ছিল কন্টকময়। পা ফসকালেই ছিল হারিয়ে যাওয়ার ভয়। জীবনের প্রতিটি সিঁড়ি তিনি ডিঙিয়েছেন সতর্কতার সঙ্গে। ঈশ্বরও তার সঙ্গে ছিলেন।
গতকাল নিজের ইনিংসের সময় বাইবেলের একটি বাণী মনে করে সাহস পেয়েছেন জেমিমাহ।
‘শেষের দিকে আমি শুধু একটি বাণী বলছিলাম—“স্থির থাকো, ঈশ্বর তোমাকে সাহায্য করবেন।” আমি শান্ত থাকার চেষ্টা করছিলাম।’
জেমিমাহ স্থির থেকেছেন। আঙুলের কড়ায় গুণে খারাপ সময় পার করেছেন। কখনও বাসে-ট্রামে-ট্রেনে, গভীর রাতে ধ্যানে বসেছেন। একাগ্রতা তাঁকে সাফল্য দিয়েছে।
পরিবার, প্রিয়জন, আস্থাভাজন:
ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির পর নভি মুম্বাইয়ের ভিআইপি স্ট্যান্ডে বসে থাকা পরিবারের দিকে একটি উড়ন্ত চুম্বন ছুঁড়ে বাবা এবং কোচ ইভানকে ধন্যবাদ জানাতে দেখা যায় জেমিমাহকে। যারা তাঁর পথপ্রদর্শক ও শক্তি। জেমিমাহ বলেছিলেন,
‘আমি আমার মা, বাবা, কোচ এবং আমার উপর বিশ্বাসকারী প্রত্যেক ব্যক্তিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। গত মাসে এটি সত্যিই কঠিন ছিল, এটি একটি স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।’
 
                        লিওনেল মেসির জীবন বদলে দেওয়ার পেছনে পরিবারের ভূমিকা ছিল অনন্য। তড়িৎ এক সিদ্ধান্তে বার্সেলোনার সঙ্গে চুক্তি। বাবা জর্জ মেসি, মা কুচ্চিটিনি থেকে শুরু করে স্ত্রী রোকুজ্জো—সবাই তাঁর জীবনের অবিচ্ছেদ অংশ। তিনি প্রায়শঃ বলেন, পরিবার ছাড়া কোনো কিছুই সম্ভব হতো না।
পারিবারিক পাশে থাকায় মেসি ফুটবল বিশ্বের আইডল, জেমিমাহ হারিয়ে যাওয়ার পর নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন।
মেসির স্বপ্ন পূরণ, জেমিমাহর অপেক্ষা:
চারবার স্বপ্নভঙ্গ। অপেক্ষা যে কত দীর্ঘ তা লিওনেল মেসির চেয়ে বেশি কে জানে। একটি সময় মনে হচ্ছিল, চাঁদের নিখুঁত দাগ হারিয়েছিল মেসির জীবনে—বিশ্বকাপ না পাওয়া।
সেটি পূরণ হয়েছে ২০২২ সালে। ফ্রান্সকে হারিয়ে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ ট্রফি উপহার দেন মেসি। স্বপ্ন তাঁর পূরণ হয়েছে। এক জীবনে নিশ্চয়ই তার আর কিছু পাওয়ার থাকার কথা নয়।
জেমিমাহও এমন একটি স্বপ্ন উপাখ্যানের অপেক্ষায়। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপে ভারত। আগের দু’বার কূলে গিয়ে ডুবে গিয়েছিল। এবার দারুণ ছন্দে থাকা দলটির প্রতিপক্ষ চোকার্স দক্ষিণ আফ্রিকা। দেখার বিষয়, স্বপ্নের পথে নিজেকে কতটা জলাঞ্জলি দিতে পারেন জেমিমাহ। তবেই দুইয়ে দুইয়ে চার মেলানো যাবে, সার্থক হবে মেসির পথ ধরে হাঁটা।

অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে গতকাল নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে ভারত। তবে পুরুষ দল জয়ের পুনরাবৃত্তি করতে পারল না। মেলবোর্নে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে দাপুটে জয় পেয়েছে অজিরা। ৮০ বল বাকি থাকতে ভারতকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পায় ভারত। তবে শুরু থেকে জশ হ্যাজলউডের বোলিং তোপে ১৮.৪ ওভারে ১২৫ রানে অলআউট হয়ে যায় অতিথিরা। দলের বিপর্যয়ে একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ঝোড়ো ফিফটি করেন অভিষেক। ১৩.২ ওভারে ১২৬ রানের লক্ষ্য অনায়াসে তাড়া করেছে অজিরা।
এই জয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়েছিল।
ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকে ভারত। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে সফরকারীরা। শুভমান গিল, সঞ্জু স্যামসন, সূর্যকুমার যাদব, তিলক ভার্মা, অক্ষর প্যাটেল দ্রুত ফিরে যান। প্রথম ছয় ব্যাটারের মধ্যে অভিষেক ছাড়া বাকিরা দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে ব্যর্থ হন।
আরেকপ্রান্তে ২০০-এর ওপরে স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করতে থাকেন অভিষেক। ৪৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে ভারত। সেখান থেকে হার্ষিত রানাকে সঙ্গে নিয়ে ৫৬ রানের জুটি গড়েন অভিষেক। ২২ বলে তুলে নেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ফিফটি । রানা ৩৩ বলে ৩৫ রান করে আউট হন। নবম ব্যাটার হিসেবে ড্রেসিংরুমে ফেরার আগে ৩৭ বলে ৬৮ রান করেন অভিষেক। তার ইনিংসে ছিল ৮টি চার ও ২টি ছক্কা। ১৮.৪ ওভারে ১২৫ রানে গুটিয়ে যায় ভারত।
অভিষেক ও রানা ছাড়া ভারতের আর কেউই দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পারেননি। এই দুজন বাদে ভারতের বাকি ৮ ব্যাটার মিলে তোলেন মাত্র ১৯ রান। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে হ্যাজেলউড ৪ ওভারে ১৩ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট।
১২৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে পঞ্চম ওভারেই দলীয় পঞ্চাশ পেরিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ৪.৩ ওভারে বরুণ চক্রবর্তীর বলে দলের ৫১ রানে আউট হন হেড। ১৫ বলে ২৮ রান করেন এই ওপেনার। এরপর মিচেল মার্শ ২৬ বলে ৪৬ রানের দাপুটে ইনিংস খেলে আউট হন। তার ইনিংসে ছিল দুইটি চার ও চারটি ছক্কা। তারপর জশ ইংলিসের ২০, মিচেল ওয়েনের ১৪ রানে সহজ জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। আগামী রোববার হোবার্টে সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হবে দুই দল।

সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। স্বাগতিকের ১৫১ রানের জবাবে মাত্র ১৬.৫ ওভারেই ম্যাচ জিতে নিয়েছে সফরকারীরা।
ক্যারিবিয়ানদের সহজ জয়ে মাত্র ২৫ বলে ৫০ রানের ইনিংস খেলেন আকিম অগাস্ত। আর রস্টোন চেজের ব্যাট থেকে আসে ২৯ বলে ৫০ রান। দুজন মিলে চতুর্থ উইকেটে গড়েন ৪৬ বলে ৯৩ রানের জুটি।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে ৩ উইকেট নেন রিশাদ হোসেন। ৪ ওভারে খরচ করেন ৪৩ রান। তাসকিন আহমেদ ৩.৫ ওভারে দেন ৫০ রান।
একাদশে ফেরা শেখ মেহেদি হাসান ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান খরচ করে নেন ১ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫১ (তামিম ৮৯, ইমন ৯, লিটন ৬, সাইফ ২৩, রিশাদ ৩, সোহান ১, নাসুম ১, জাকের ৫, মেহেদি ০*, শরিফুল ০, তাসকিন ৯; হোল্ডার ৪-০-৩২-২, আকিল ৪-০-২৬-১, শেফার্ড ৪-০-৩৬-৩, চেজ ৪-০-২৩-১, পিয়ের ৩-০-২৩-২, মোটি ১-০-১১-০)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৬.৫ ওভারে ১৫২/৫ (আথানেজ ১, জাঙ্গু ৩৪, কিং ৮, চেজ ৫০, অগাস্ত ৫০, পাওয়েল ৫, মোতি ৩; মেহেদি ৪-০-১৮-১, শরিফুল ২-০-১২-০, তাসকিন ৩.৫-০-৫০-০, নাসুম ৩-০-২৯-১, রিশাদ ৪-০-৪৩-৩)
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩-০ ব্যবধানে জয়ী

মেলবোর্নে নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে ভারত। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ- ৩৩৯ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করে রীতিমতো ইতিহাস গড়ে হরমনপ্রীত কৌরের দল।
এই অবিশ্বাস্য জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন টপ অর্ডার ব্যাটার জেমিমাহ রদ্রিগেজ। ১৩৪ বলে অপরাজিত ১২৭ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে ভারতকে ফাইনালে তুলেছেন। তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ঠান্ডা মাথায় ম্যাচ শেষে করে আসা একদমই সহজ ছিল না। তবে জেমিমাহর দৃঢ় মানসিকতা মনে করিয়ে দিয়েছে ‘চেজ মাস্টার’ বিরাট কোহলির কথা।
ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ অনেক ম্যাচে জিতিয়েছেন কোহলি। ভারতের মেয়েদের ফাইনাল নিশ্চিতের পর পুরুষ ক্রিকেটের চেজ মাস্টার কোহলিও সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন জেমিমাহ ও ভারত দলকে।
কোহলি এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে অসাধারণ জয়। মেয়েদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স, আর জেমিমাহর ইনিংস—এক কথায় অসাধারণ। এই জয় বিশ্বাস, অধ্যবসায় আর আবেগের প্রতীক। গর্বিত টিম ইন্ডিয়া!’
কোহলির এই বার্তা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। হাজারো ক্রিকেটপ্রেমী তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে অভিনন্দন জানায় জেমিমাহকে—যার ইনিংস এখন অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে পুরো ভারতবর্ষের মেয়েদের জন্য।
এক অবিশ্বাস্য জয়, এক নতুন যুগ। এই জয় ভেঙে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার টানা জয়রথ। নারী বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথমবার ভারত ৩৩৯ রান তাড়া করে জয় পেল, আর পা রাখল তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে।

মাত্র ১৭ বছর বয়সে নেটে অনুশীলনের সময় প্রাণ হারালেন অস্ট্রেলিয়ার তরুণ ক্রিকেটার বেন অস্টিন। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়, এরপরই স্তব্ধ হয়ে পড়ে মেলবোর্নের ক্রিকেট।
ফার্নট্রি ক্রিকেট ক্লাবের নেটে সাইডআর্ম থেকে আসা একটি বল অস্টিনের ঘাড়ে আঘাত করে। মুহূর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতালে নেওয়া হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। অস্টিন হেলমেট পরে ছিলেন, তবে তাতে ছিল না ‘স্টেম গার্ড’—যা পেশাদার পর্যায়ে বাধ্যতামূলক হলেও ক্লাব ক্রিকেটে কেবল পরামর্শস্বরূপ ব্যবহৃত।
অস্টিনের মৃত্যুর পর পুরো ক্রিকেট বিশ্বে শোকের ছায়া। আজ মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) ভারত-অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি শুরুর আগে এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়। দুই দলের ক্রিকেটার ও কর্মকর্তারা কালো আর্মব্যান্ড পরে মাঠে নামেন।
আরও পড়ুন
    
| দুশ্চিন্তায় পুরো বিশ্বকাপেই কেঁদেছেন ভারতকে ফাইনালে তোলা জেমিমাহ |   | 
স্টেডিয়ামের বিশাল স্ক্রিনে প্রদর্শিত হয় বেন অস্টিনের ছবি, মাঠের এক পাশে রাখা হয় তাঁর ক্যাপ—এক তরুণ স্বপ্নবাজের শেষ প্রতীক হিসেবে। নারী বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেও একই দৃশ্য—কালো আর্মব্যান্ডে শ্রদ্ধা জানায় ভারত ও অস্ট্রেলিয়া নারী দল।
দেশজুড়ে ক্লাব ও রাজ্য দলের খেলোয়াড়েরা ব্যাট তুলে শ্রদ্ধা জানান অস্টিনকে। শেফিল্ড শিল্ডে ভিক্টোরিয়া ও তাসমানিয়ার খেলোয়াড়রা এক মিনিট নীরবতায় স্মরণ করেন তাঁকে। ফার্নট্রি ক্লাবের সামনে গড়ে উঠেছে স্বতঃস্ফূর্ত স্মৃতিসৌধ—ফুল, নোট, চকোলেট আর ব্যাটে ভরে গেছে জায়গাটা।
বেনের বাবা জেস অস্টিন বলেন, ‘এই দুর্ঘটনা আমাদের ভেঙে দিয়েছে। তবে কিছুটা শান্তি পাই এই ভেবে যে, সে যা সবচেয়ে ভালোবাসত, ঠিক সেটাই করছিল—বন্ধুদের সঙ্গে নেটে নেমে ক্রিকেট খেলা।’
ক্রিকেট ভিক্টোরিয়ার প্রধান নির্বাহী নিক কামিন্স বলেন, ‘বেন ছিল সেই রকম তরুণ, যেভাবে আমরা আমাদের সন্তানদের দেখতে চাই—শীতকালে ফুটবল, গ্রীষ্মে ক্রিকেট খেলত। সে ছিল প্রাণবন্ত, ভদ্র, আর ক্রিকেটে মগ্ন এক খাঁটি অজি ছেলেটি।’
এই দুর্ঘটনার পর নেট অনুশীলনে সাইডআর্ম ব্যবহারের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, এখনই সমাধান নয়—প্রথমে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্তদের মানসিক সহায়তায়। অস্টিনের সতীর্থ লিয়াম ভার্টিগান বলেন, ‘সে ছিল প্রাণবন্ত, ভদ্র, সবসময় হাসিখুশি। ক্রিকেট ছিল তার নিঃশ্বাস।’
আরও পড়ুন
    
| বাংলাদেশ 'এ' দলের সফর থেকে কিউই দলে ক্লার্ক |   | 
এ যেন ফিলিপ হিউজের মৃত্যুর প্রতিধ্বনি। ২০১৪ সালের মর্মন্তুদ স্মৃতি—যখন মাঠে বাউন্সারের আঘাতে প্রাণ হারান হিউজ। তাঁর পরিবারও শোক জানিয়েছে বেনের পরিবারকে, জানিয়েছে প্রার্থনা ও সহমর্মিতা।
ইতিমধ্যেই অস্টিনের পরিবারের জন্য খোলা ‘গোফান্ডমি’ তহবিলে দান এসেছে এক লাখ বিশ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলারের বেশি। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ও ক্রিকেট ভিক্টোরিয়া জানিয়েছে, এই কঠিন সময়ে বেনের পরিবার ও সতীর্থদের পাশে থাকবে তারা—যেভাবে পুরো ক্রিকেট পরিবার পাশে দাঁড়ায় নিজের একজনকে হারানোর বেদনাতেও।