মাঝারি রান তাড়ায় মেহেদি হাসান মিরাজের সাথে নাজমুল হোসেন শান্ত যখন ব্যাট করছিলেন, বাংলাদেশ শিবিরে উঁকি দিচ্ছিল সহজ জয়। তবে সেট হয়ে অধিনায়ক শান্তর বিদায়ের পর নামে ধস। টানা উইকেট হারিয়ে বিশাল হারের স্বাদ পেতে হয়েছে সফরকারীদের। বাংলাদেশ কাপ্তান মনে করেন, ভুল সময়ে তার আউটেই দলের সর্বনাশ হয়েছে।
আরও পড়ুন
২৩ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে বড় পরাজয় বাংলাদেশের |
বোলারদের দারুণ পারফরম্যান্সে প্রথম ওয়ানডে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য ছিল মাত্র ২৩৬। রান তাড়ায় এক পর্যায়ে স্কোর ছিল ২ উইকেটে ১২০। ফিফটির সুবাস পাওয়া শান্ত ৪৭ রানে ফিরতেই রাতারাতি বদলে যায় চিত্র। মাত্র ২৩ রানে শেষ উইকেট হারিয়ে ৯২ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। ব্যাটিং অর্ডার ধসিয়ে দেন ৬ উইকেট নেওয়া রহস্য স্পিনার আল্লাহ গাজানফর। তার বোলিংয়ের সামনে দিশেহারা হয়ে যান ব্যাটাররা।
ম্যাচ শেষে শান্ত বলেন, তারই উচিত ছিল ম্যাচ শেষ করা আসার।
“আমরা প্রথম ১৫-২০ ওভারে ভালো শুরু পেয়েছিলাম। কিন্তু মাঝের ওভারগুলোতে আমরা নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন নবি। আমাদের আগ্রাসী হওয়ার দরকার ছিল না। বোলারদের জন্য উইকেট যথেষ্ট সাহায্য করেছিল। আমি মনে করি শহিদি ও নবি সত্যিই ভালো ব্যাটিং করেছে। আমার উইকেটই পার্থক্য তৈরি করেছে। আমি সেট ব্যাটার ছিলাম এবং আরও বেশি সময় ব্যাট করতে হত।”
শান্তর প্রশংসা পাওয়া ইনিংস খেলে আফগানিস্তানের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডারই মূলত ব্যাট হাতে পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন দলের জন্য। ৭১ রানে ৫ উইকেট হারানোর পোড় খেলেছেন ৭৯ বলে ৮৪ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। তার ব্যাটে চেপে যে লড়িয়ে স্কোর পায় আফগানরা, সেটা ডিফেন্ড করতে স্পিন ভেলকি দেখান গাজানফর।
আরও পড়ুন
মুস্তাফিজ-তাসকিনের তোপ সামলে নবির ব্যাটে চড়ে আফগানিস্তানের লড়াকু পুঁজি |
শান্ত অবশ্য মনে করেন, গাজানফরের স্পিনের সামনে তাদের এই বিপর্যয় নিছকই দুর্ঘটনা মাত্র।
“আফগানিস্তান দলে সবসময় রহস্যময় স্পিনার থাকে এবং সে (আল্লাহ গাজানফর) সত্যিই ভালো বোলিং করেছে। আমাদের প্রস্তুতিটি দুর্দান্ত ছিল, কিন্তু দিনটা আমাদের ছিল না। আশা করি আমরা এখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারব।”
৮ নভেম্বর ২০২৪, ৭:০৩ পিএম
৮ নভেম্বর ২০২৪, ৪:৩৬ পিএম
উইকেট যেমনই হোক, একটি দল যখন মাত্র ২৩ রানে শেষ ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলে - তখন এর পক্ষে কিছু বলাটা কঠিনই। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে রান তাড়ায় এমনই এক নাটকীয় ব্যাটিং ধসের শিকার হয়ে বিশাল ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। সহ-অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ এজন্য দুষলেন তাদের ব্যাটিংয়ের সময় আচমকাই উইকেটের বদলে যাওয়া আচরণকে!
শারজাহতে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে রান করাটা যে খুব কঠিন ছিল তাও নয়। ৩৫ রানে চার উইকেট হারানোর পরও তাই ২৩৫ রান করে ফেলে আফগানিস্তান। যেখানে বড় অবদান রাখেন মোহাম্মদ নবি প্রায় ১০০-এর বেশি স্ট্রাইক রেটে ৮৪ রানের ইনিংসে। রান তাড়ায় এক পর্যায়ে বাংলাদেশের রান ছিল ২ উইকেটে ১২০, ক্রিজে দুই সেট ব্যাটার মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্ত। বিস্ময়ের জন্ম দিয়ে সেখান থেকে স্রেফ ১৪৩ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন
ম্যাচ জিততে টপ অর্ডারের কাছে আরও বেশি রানের আকুতি মিরাজের |
দ্বিতীয় ম্যাচের আগেরদিন মিরাজের সংবাদ সম্মেলনে তাই ঘুরেফিরেই আসল প্রসঙ্গটি। অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার তাতে তাদের ব্যর্থতা আড়াল করার চেষ্টাই যেন করলেন-
“একটা জিনিস দেখেন, যখন আমি আর শান্ত ব্যাটিং করছিলাম, তখন কিন্তু আমাদের দুজনের কাছেই উইকেট সহজই মনে হচ্ছিল। কিন্তু বিশ ওভারের পর বল যখন পুরনো ও নরম হয়ে গেল, তখন থেকে হঠাৎ করেই টার্ন শুরু বেশি হতে শুরু করল। সেট হওয়ার পরও তাই আমাকে আর শান্তকে মাঝখানে খুব সংগ্রাম করতে হচ্ছিল।”
তৃতীয় উইকেটে মিরাজ ও শান্ত যেভাবে ব্যাট করছিলেন, তখন বল ব্যাটে আসছিল খুব ভালোভাবেই৷ শান্ত একটু আগ্রাসন দেখালেও মিরাজ ছিলেন ধীরস্থির। তবে দুজনই অহেতুক চাপ নিতে গিয়ে আউট হয়ে প্রতিপক্ষকে ম্যাচে ফেরার সুযোগ করে দেন। আল্লাহ গাজানফারের ৬ উইকেটের দুর্দান্ত এক স্পেল বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরারই সুযোগ দেয়নি আর।
আরও পড়ুন
সাকিব নন, নিজের অর্জনেই পরিচিত হতে চান মিরাজ |
সেট হয়েও ম্যাচ শেষ না করতে পারার হতাশা ফুটে উঠল মিরাজের কন্ঠেও-
“উইকেট আশানুরূপ আচরণ করেনি। হ্যাঁ, ওই সময় আমরা দুজন যেভাবে সেট ছিলাম, আমাদের দুজনের মধ্যে একজনের ম্যাচ শেষ করা উচিত ছিল। কারণ আমি শান্তকে বারবার বলছিলাম, এই উইকেটে আমাদের দুজনের যেহেতু খেলতে সমস্যা হচ্ছে, পরের ব্যাটারদের জন্য কাজটা আরও কঠিন হবে।”
সাম্প্রতিক সময়ে ঘরের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয়ের ম্যাচে কানপুরে ভারত জয় তুলে নিয়েছিল আড়াই দিনেরও কম সময়ে। তবে ওই ম্যাচে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল কানপুর স্টেডিয়ামের আউটফিল্ড। শেষ পর্যন্ত ভেন্যুটির আউটফিল্ডকে ‘অসন্তোষজনক’ রেটিং দিয়েছে আইসিসি। এই রেটিংয়ের ফলে ভেন্যুটি পেয়েছে একটি ডিমেরিট পয়েন্ট।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত হওয়া ম্যাচটির প্রথম দিনে খেলা সম্ভব হয়েছিল মাত্র ৩৫ ওভার। এরপর একটি বলও মাঠে গড়ায়নি পরের দুই দিনেও। যদিও তৃতীয় দিন ম্যাচের জন্য নির্ধারিত সময়ে বৃষ্টি ছিল না। শুধু তাই নয়, টেস্ট শুরুর আগে কানপুর রাজ্যের পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট গ্রিন পার্কের একটি স্ট্যান্ডকে অনিরাপদ বলেছিল এবং স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষকে নিরাপত্তার স্বার্থে নির্দেশ দিয়েছিল যে, দর্শকদের জন্য যেন গ্যালারির ওপরের দিকের স্তরে সীমিত সংখ্যক আসন রাখা হয়।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশ দলকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে, দুর্বল পরিকল্পনা স্পষ্ট: বুলবুল |
উত্তরপ্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (ইউপিসিএ) কানপুরের গ্রীন পার্ক স্টেডিয়ামটি ইউপি সরকারের সাথে স্বাক্ষরিত একটি এমওইউ চুক্তির ভিত্তিতে ব্যবহার করে। স্টেডিয়ামের জমির মালিক সরকার, তবে সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী স্টেডিয়াম এবং এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ইউপিসিএরই।
কানপুর টেস্টে আড়াই দিনেরও বেশি সময় নষ্ট হওয়ার পরও অবিশ্বাস্য দক্ষতা দেখিয়ে পঞ্চম দিন শেষ সেশনের আগেই জয় তুলে নেয় ভারত। নিজেদের প্রথম ইনিংসে ওভারপ্রতি ৭.৩৬ ওভারে রান তুলে ৫২ ওভারে করে ৩৮৩ রান। বাংলাদেশকে দুই ইনিংস মিলিয়ে ১২১.২ ওভারের মধ্যে অলআউট করে মাঠ ছাড়ে বিজয়ীর বেশে।
আরও পড়ুন
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে অনিশ্চিত মুশফিক |
আউটফিল্ড ‘অসন্তোষজনক’ রেটিং পেলেও কানপুরের উইকেটকে আইসিসির কাছ থেকে ‘সন্তোষজনক’ রেটিং পেয়েছে।