রান-রেটের নেই চাপ, ২ উইকেটে রান ১২০ - ২৩৬ রান রান তাড়ায় এরপরও কী চাপে পড়ে হেরে যাওয়া সম্ভব? সহজ ম্যাচ কঠিন করার অবিশ্বাস্য মিশনে নেমে সেটাই করে দেখাল বাংলাদেশ৷ যে ম্যাচে আফগানিস্তানের ফেরার সুযোগ প্রায় শেষই হয়ে যাচ্ছিল, ব্যাটারদের নাটকীয় ব্যর্থতায় সেই ম্যাচেই নাজমুল ইসলাম শান্তর দল পরাজয় বরণ করল বিশাল ব্যবধানে। শারজাহ’র ইতিহাস গড়ার ম্যাচে বাংলাদেশের সঙ্গী হল ভুলে যাওয়ার এক অভিজ্ঞতা।
শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবারের ম্যাচে আফগানিস্তান গুটিয়ে গিয়েছিল ২৩৫ রানে। মাত্র ২৩ রানে শেষ ৮ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ রান তাড়ায় থেমেছে ৩৪.৩ ওভারে মাত্র ১৪৩ রানে। ৯২ রানের জয়ের তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে লিড নিল আফগানরা।
আরও পড়ুন
২৩ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে বড় পরাজয় বাংলাদেশের |
মাঝারি রান তাড়ায় বাংলাদেশের ধাক্কা খায় দ্বিতীয় ওভারেই। অফ স্পিনার আল্লাহ ঘাজানফারের ক্যারম ডেলিভারি ধরতেই পারেননি তানজিদ হাসান তামিম। ব্যাত-প্যাডের ফাঁক গলে হন বোল্ড। তবে সেখান থেকে খুব দ্রুতই দলকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যান অভিজ্ঞ সৌম্য সরকার ও নাজমুল হোসেন শান্ত। ফজলহক ফারুকির এক ওভারে দুই চার মেরে ভালো কিছুরই আভাস দেন সৌম্য।
অন্যপ্রান্তে শান্তও চড়াও হন বোলারদের ওপর। চার-ছয়ের মারে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে এই জুটি যোগ করেন পঞ্চাশ রান। জুটি যখন ভালোভাবেই সেট, ঠিক তখনই বিপত্তি। আজমতউল্লাহ ওমারজাইয়ের বলে পুল করতে টাইমিং হয়নি সৌম্যর। বাউন্ডারির সামনে থেকে ফাইন লেগে থাকা ফারুকির দারুণ ক্যাচে শেষ হয় তার সম্ভাবনাময় ৩৩ রানের ইনিংস।
আরও পড়ুন
মুস্তাফিজ-তাসকিনের তোপ সামলে নবির ব্যাটে চড়ে আফগানিস্তানের লড়াকু পুঁজি |
এই উইকেট পতনের পর কমে আসতে থাকে রানের গতি। চারে নামা মেহেদি হাসান মিরাজ কিছুটা সাবধানী ব্যাটিং করায় ঝুঁকি নিচ্ছিলেন শান্ত। আর তা করতে গিয়ে ভালো ছন্দে থাকা এই বাঁহাতি ব্যাটারও সেট হয়ে আউট হয়ে যান। মোহাম্মদ নবির বলে সুইপ করতে গিয়ে তুলে দেন ক্যাচ। তার আগে চারটি চার ও ২ ছক্কায় করেন ৪৭ রান। বাংলাদেশের নাটকীয় ব্যাটিং ধসের সেই শুরু।
আর সেটার কারণ শুরু হয় অতি রক্ষনাত্বক ব্যাটিংয়ের কারণেই। ওভারের পর ওভার বাউন্ডারি না আসায় বাড়ে চাপ। সেটা সরাতে গিয়ে ঘাজানফারকে সুইপ করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন মিরাজ। মাত্র ১ ছক্কায় ৫৪.৯০ স্ট্রাইক রেটে করেন মোটে ২৮ রান।
এর পরের ওভারে রশিদ খানের দুর্দান্ত এক গুগলিতে বোল্ড হয়ে চাপ আরও বাড়িয়ে দেন মাহমুদউল্লাহ। এর রেশ না কাটতেই জোড়া ধাক্কায় বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন সেই ঘাজানফার। প্রথমকে মুশফিকুর রহিমকে স্টাম্পড করার পর ফেরান রিশাদ হোসেনকেও।
একপ্রান্তে আশা হয়ে টিকে থাকা তাওহীদ হৃদয়কে লড়াইয়ের সুযোগ না দিয়ে সাজঘরের পথ দেখান রশিদ। বাকি দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়ে একাই বাংলাদেশের হন্তারক বনে যান তরুণ স্পিনার ঘাজানফার। আর এজন্য তিনি গুনেন মাত্র ২৬ রান।
ম্যাচের প্রথম ভাগে বাংলাদেশের বোলাররাও খারাপ করেননি মোটেও। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই রহমানউল্লাহ গুরবাজজে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে শুভসূচনা এনে দেন তাসকিন আহমেদ। দারুণ এক স্পেলে অন্যপ্রান্তে তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন অভিজ্ঞ পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। এই দুজনের তোপে স্রেফ ৭১ রানেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলেছি আফগানিস্তান।
আরও পড়ুন
টসে হেরে বোলিংয়ে বাংলাদেশ, রিশাদের অভিষেক |
তবে ক্রিজে যে ছিলেন দলটির পোড় খাওয়া যোদ্ধা মোহাম্মদ নবি, যিনি অনেকবারই এমন সব চাপের মুখ থেকে দলকে উদ্ধার করেছেন। সেটাই করে দেখান আরও একবার। আগ্রাসী ব্যাটিংটা বেশ ভালো জানলেও পরিস্থিতির চাহিদা বুঝে একটা লম্বা সময় পর্যন্ত ইনিংস টেনে নেন ধীরলয়ে। অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদির সাথে গড়েন ১০৪ রানের মহামূল্যবান এক জুটি, যা শেষ পর্যন্ত গড়ে দেয় ম্যাচের ভাগ্য।
৫২ রানে শহিদির বিদায়ের পর হাত খুলে খেলতে শুরু করেন নবি। হাঁকান কিছু বড় শট। তাতে জাগে তার সেঞ্চুরির আশা। তবে তাসকিনের বল আউট হন ৭৯ বলে ৮৪ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে। চারের মার ছিল চারটি এবং ছক্কা ৩টি। ৫০তম ওভারে গুটিয়ে যাওয়ার আগে তাতে আফগানিস্তান পায় লড়াই করার স্কোর। সমান ৪টি করে উইকেট নেন তাসকিন ও মুস্তাফিজুর।
৮ নভেম্বর ২০২৪, ৭:০৩ পিএম
৮ নভেম্বর ২০২৪, ৪:৩৬ পিএম
উইকেট যেমনই হোক, একটি দল যখন মাত্র ২৩ রানে শেষ ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলে - তখন এর পক্ষে কিছু বলাটা কঠিনই। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে রান তাড়ায় এমনই এক নাটকীয় ব্যাটিং ধসের শিকার হয়ে বিশাল ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। সহ-অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ এজন্য দুষলেন তাদের ব্যাটিংয়ের সময় আচমকাই উইকেটের বদলে যাওয়া আচরণকে!
শারজাহতে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে রান করাটা যে খুব কঠিন ছিল তাও নয়। ৩৫ রানে চার উইকেট হারানোর পরও তাই ২৩৫ রান করে ফেলে আফগানিস্তান। যেখানে বড় অবদান রাখেন মোহাম্মদ নবি প্রায় ১০০-এর বেশি স্ট্রাইক রেটে ৮৪ রানের ইনিংসে। রান তাড়ায় এক পর্যায়ে বাংলাদেশের রান ছিল ২ উইকেটে ১২০, ক্রিজে দুই সেট ব্যাটার মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্ত। বিস্ময়ের জন্ম দিয়ে সেখান থেকে স্রেফ ১৪৩ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন
ম্যাচ জিততে টপ অর্ডারের কাছে আরও বেশি রানের আকুতি মিরাজের |
দ্বিতীয় ম্যাচের আগেরদিন মিরাজের সংবাদ সম্মেলনে তাই ঘুরেফিরেই আসল প্রসঙ্গটি। অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার তাতে তাদের ব্যর্থতা আড়াল করার চেষ্টাই যেন করলেন-
“একটা জিনিস দেখেন, যখন আমি আর শান্ত ব্যাটিং করছিলাম, তখন কিন্তু আমাদের দুজনের কাছেই উইকেট সহজই মনে হচ্ছিল। কিন্তু বিশ ওভারের পর বল যখন পুরনো ও নরম হয়ে গেল, তখন থেকে হঠাৎ করেই টার্ন শুরু বেশি হতে শুরু করল। সেট হওয়ার পরও তাই আমাকে আর শান্তকে মাঝখানে খুব সংগ্রাম করতে হচ্ছিল।”
তৃতীয় উইকেটে মিরাজ ও শান্ত যেভাবে ব্যাট করছিলেন, তখন বল ব্যাটে আসছিল খুব ভালোভাবেই৷ শান্ত একটু আগ্রাসন দেখালেও মিরাজ ছিলেন ধীরস্থির। তবে দুজনই অহেতুক চাপ নিতে গিয়ে আউট হয়ে প্রতিপক্ষকে ম্যাচে ফেরার সুযোগ করে দেন। আল্লাহ গাজানফারের ৬ উইকেটের দুর্দান্ত এক স্পেল বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরারই সুযোগ দেয়নি আর।
আরও পড়ুন
সাকিব নন, নিজের অর্জনেই পরিচিত হতে চান মিরাজ |
সেট হয়েও ম্যাচ শেষ না করতে পারার হতাশা ফুটে উঠল মিরাজের কন্ঠেও-
“উইকেট আশানুরূপ আচরণ করেনি। হ্যাঁ, ওই সময় আমরা দুজন যেভাবে সেট ছিলাম, আমাদের দুজনের মধ্যে একজনের ম্যাচ শেষ করা উচিত ছিল। কারণ আমি শান্তকে বারবার বলছিলাম, এই উইকেটে আমাদের দুজনের যেহেতু খেলতে সমস্যা হচ্ছে, পরের ব্যাটারদের জন্য কাজটা আরও কঠিন হবে।”
সাম্প্রতিক সময়ে ঘরের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয়ের ম্যাচে কানপুরে ভারত জয় তুলে নিয়েছিল আড়াই দিনেরও কম সময়ে। তবে ওই ম্যাচে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল কানপুর স্টেডিয়ামের আউটফিল্ড। শেষ পর্যন্ত ভেন্যুটির আউটফিল্ডকে ‘অসন্তোষজনক’ রেটিং দিয়েছে আইসিসি। এই রেটিংয়ের ফলে ভেন্যুটি পেয়েছে একটি ডিমেরিট পয়েন্ট।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত হওয়া ম্যাচটির প্রথম দিনে খেলা সম্ভব হয়েছিল মাত্র ৩৫ ওভার। এরপর একটি বলও মাঠে গড়ায়নি পরের দুই দিনেও। যদিও তৃতীয় দিন ম্যাচের জন্য নির্ধারিত সময়ে বৃষ্টি ছিল না। শুধু তাই নয়, টেস্ট শুরুর আগে কানপুর রাজ্যের পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট গ্রিন পার্কের একটি স্ট্যান্ডকে অনিরাপদ বলেছিল এবং স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষকে নিরাপত্তার স্বার্থে নির্দেশ দিয়েছিল যে, দর্শকদের জন্য যেন গ্যালারির ওপরের দিকের স্তরে সীমিত সংখ্যক আসন রাখা হয়।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশ দলকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে, দুর্বল পরিকল্পনা স্পষ্ট: বুলবুল |
উত্তরপ্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (ইউপিসিএ) কানপুরের গ্রীন পার্ক স্টেডিয়ামটি ইউপি সরকারের সাথে স্বাক্ষরিত একটি এমওইউ চুক্তির ভিত্তিতে ব্যবহার করে। স্টেডিয়ামের জমির মালিক সরকার, তবে সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী স্টেডিয়াম এবং এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ইউপিসিএরই।
কানপুর টেস্টে আড়াই দিনেরও বেশি সময় নষ্ট হওয়ার পরও অবিশ্বাস্য দক্ষতা দেখিয়ে পঞ্চম দিন শেষ সেশনের আগেই জয় তুলে নেয় ভারত। নিজেদের প্রথম ইনিংসে ওভারপ্রতি ৭.৩৬ ওভারে রান তুলে ৫২ ওভারে করে ৩৮৩ রান। বাংলাদেশকে দুই ইনিংস মিলিয়ে ১২১.২ ওভারের মধ্যে অলআউট করে মাঠ ছাড়ে বিজয়ীর বেশে।
আরও পড়ুন
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে অনিশ্চিত মুশফিক |
আউটফিল্ড ‘অসন্তোষজনক’ রেটিং পেলেও কানপুরের উইকেটকে আইসিসির কাছ থেকে ‘সন্তোষজনক’ রেটিং পেয়েছে।