বিপিএল মাতিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে। চাপের মুখে নেমে প্রথম ম্যাচেই খেলেন ৬৮ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। রাতারাতি যা তারকা খ্যাতি এনে দেয় জাকের আলি অনিককে। এরপর চলমান ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও খেলছিলেন দুর্দান্ত। খেলছিলেন বলার কারণ, এই পারফরম্যান্সই তাকে এবার লঙ্কানদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচেও সুযোগ করে দিয়েছে।
প্রথমবারের মত ৫০ ওভারের ক্রিকেটে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটারের আজকের অবস্থানে আসার পেছনে বড় অবদান ছিল তার বোন শাকিলা ববির। একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি শুনিয়েছেন জাকের আলির ক্রিকেটার হওয়ার শুরুর দিনগুলোর গল্প, ক্রিকেটের প্রতি তাদের পারিবারিক ভালোবাসা সহ আরও অনেক বিষয়ে।
টি-স্পোর্টসের পাঠকদের জন্য শাকিলা ববির সেই সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল :
প্রশ্ন: বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার টি-টোয়েন্টি সিরিজ পুরোটাই একরকম জাকের আলি অনিকময় হয়ে গিয়েছিল। মাঠে খেলছেন জাকের, আর প্রেসবক্সে আপনি প্রতিদিন আসছেন, সবাই কথা বলছেন, মেয়ে আবার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ঘুরছে আশেপাসে, পুরো ব্যাপারটা কেমন লাগছে?
শাকিলা ববি: এটা আসলেই অনেক ভালো লাগার। সত্যি বলতে এমন একটা অবস্থা যে তৈরি হবে, এটা আমার কল্পনাতেও ছিল না। প্রথম ম্যাচে জাকের রান করার পর পুরো পরিবেশটাই আসলে বদলে গেছে। আমার কাছে আবহটা একদম নতুন মনে হয়েছে। উপভোগ করার মত ছিল।
প্রশ্ন: এমন একটা দিনের স্বপ্ন দেখেছেন সবসময়, বলেছেন। তবে যদি জানতে চাইনা, কোনো একটা দিন বা একটা পর্যায়ে কি কখনও মনে হয়েছিল যে হয়তা স্বপ্নটা পূরণ নাও হতে পারে?
শাকিলা ববি: না, এক মুহূর্তের জন্যও এটা আমাদের মনে হয়নি। আমার যেমন মনে হয়নি, আমার পরিবারেরও এটা মনে হয়নি। ক্রিকেটের জন্য অনিকের নিবেদন আমরা খুব কাছ থেকে দেখেছি। ও যে কি পরিমাণ ত্যাগ স্বীকার করেছে, সেটা আমরা জানি। আমার কাছে মনে হয় পরিশ্রমের ফল একটু দেরিতে হলেও পাওয়া যায়। এখানে ধৈর্য্য একটা ব্যাপার ছিল, আর অনিক বরাবরই অনেক ধৈর্য্যশীল, সব ব্যাপারেই। ওর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে একটা সময়ে ফল আসবেই। তাই আমাদের একটা বিশ্বাস ছিল যে, ও যেহেতু এত পরিশ্রম করছে, তাই এটার ফল একদিন পাবেই। দেরিতে হলেও পাবে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের অধিকাংশ ক্রিকেটারদের উঠে আসার গল্পটা বেশ কষ্টের মধ্য দিয়ে আসারই হয়। অধিকাংশ পরিবারেই ক্রিকেটার কেউ হতে চাইবে, এটা খুব সহজে নেওয়া হয়নি। আপনি ভাইকে অনেক সাপোর্ট দিয়েছেন ক্রিকেটার হওয়ার পথে। ভাই একদিন বড় খেলোয়াড় হবেনই, এই পোক্ত বিশ্বাসটা কীভাবে জন্মেছিল আপনার?
শাকিলা ববি: আমার ছোট ভাই অপু, মূলত যাকে দেখে অনিকের ক্রিকেটার হওয়ার শুরু, অপুকেই আমি অনিকের প্রথম কোচ বলব। অনিক শুরু থেকেই বল ধরা বা ব্যাটিং করার যে স্কিল ছিল, সেটা দেখে মনে হত, আরে ও তো এই বয়সেই এরকম খেলে। আর এই কারণেই পারিবারিকভাবে সবার এরকম সমর্থন দেওয়া। আর ছোট হওয়ায় সবাই ওকে একটু বেশি আদর করতাম আমরা। তাই সাপোর্টটা আরও বেশি ছিল। পরে দেখা গেল যে ও আসলেই ভালো খেলছে। ছোট থাকতে হবিগঞ্জের মাঠে যখন ও খেলত, তখনও ওর খেলা দেখতে অনেক মানুষ আসত। ওর ব্যাটিং দেখতে, ওর কিপিং দেখতে, কারণ ও উচ্চতায় ছোট, কিন্তু মারতেসে বড়দের মত।
প্রশ্ন: প্রথমদিন জাকের আলিকে জাতীয় দলের হয়ে খেলতে দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন, পরিবারের সবারও বলেছেন অবস্থাটা একই ছিল। মানে, আবেগ আপনাদেরও ছুয়ে যায়। প্রশ্নটা এখানেই, সংবাদ সম্মেলনে আপনার প্রশ্ন করা বা জাকেরর উত্তর দেওয়ায় যে পেশাদারিত্ব দেখা গেল, সেটা কিভাবে এল? সংবাদ সম্মেলনে আপনাদের দুজনকেই দেখা গেছে নিরাবাগে, অথচ দিনটা আপনাদের জন্য সবচেয়ে আবেগের!
শাকিলা ববি: আমার কাছে মনে হয় জিনিসটা পারিবারিকভাবেই এসেছে। আব্বা আমাদের এই শিক্ষাটাই দিয়েছেন যে যখন যে কাজটা করবে, তখন সেটা ঠিকঠাক করতে। তখন অন্য কাজ করা যাবে না। যেমন, শৃঙ্খলার ব্যাপারটা আমরা পরিবার থেকেই শিখেছি। কারণ, আমাদের বাবা আর্মিতে ছিলেন। আমরা ঘুম থেকে ঠিক সকাল ৬টায় উঠতাম। এটা করতেই হত। খাওয়া-দাওয়া করে, দৌড়াদৌড়ি করলে দরকার হলে আবার ঘুমাও। কিন্তু নিয়ম মেনে চলতে হবে। একটা রুটিন ফলো করতে হবে। উনি এটা বলতেন। সেই ডিসিপ্লিনের ফলশ্রুতি হল এটা পেশাদারিত্বের ব্যাপারটা, আমার কাছে যা মনে হয়।
প্রশ্ন: ভাইকে নিয়ে আপনার স্বপ্ন যে অনেক বড়, সেটা তাকে ক্রিকেটার বানানোর পেছনে আপনার নিবেদন, ত্যাগ স্বীকার দেখলেই বোঝা যায়। ক্যারিয়ার শেষে জাকেরের নামের পাশে আপনি কি কি অর্জন দেখতে চান? দলগত বা ব্যক্তিগত দুই দিক থেকেই?
শাকিলা ববি: ছয়টা ডিসমিসালের অনিকের কিন্তু একটা রেকর্ড আছে। এমন কিছু। অনিক কিন্তু উইকেটকিপিং খুব ভালো করে। আমি খালেদ মাসুদ পাইলটের খুব ভক্ত। উনার পর যদি কারো কিপিংয়ের ভক্ত হয়ে থাকি আমি, সেটা হল জাকের আলি অনিকের। আর সেটা অনেক আগে থেকে। ও কিপিং গ্লাভস সবচেয়ে ভালো করে। আমার কাছে মনে হয় ও উইকেটের পেছনে থাকলে বলও বেশি যায় সেখানে। ওর লাক ভালো। যেমন ঢাকা প্লাটুনের হয়ে একটি ম্যাচে, সেই ম্যাচে কিন্তু অনিক একাদশে ছিল না। (এনামুল হক) বিজয় চোটে পড়ল, তার জায়গায় নেমে অনিকের ছয়টা ডিসমিসাল হল। তাই কিপিং নিয়ে একটা আশা আছে যে ও একটা রেকর্ড করবে। আর হ্যাঁ, যদি ভালো স্কোর করতে পারে, অনেক করতে পারে, ভালো লাগবে।
প্রশ্ন: জাকের, আপনি বা আপনার ছোট ভাই অপু, ক্রিকেট এবং উইকেটকিপিংয়ের প্রতি পারিবারিকভাবে আপনাদের এই টান কীভাবে তৈরি হল?
শাকিলা ববি: এটা আমাদের জেনারেশন থেকে শুরু। আবার আব্বা আসলে অ্যাথলেট, উনি আর্মির মানুষ, উনি আসলে ক্রিকেট পছন্দ করতেন না। তাই উনার প্রশ্ন ছিল যে সারাদিনের খেলা এটা আবার কেমন খেলা। আমার ছোট ভাই অপু যখন ক্রিকেট খেলত, আব্বা তখন বাঁধা দিতেন যে ক্রিকেট খেলা যাবে না, খেললে ফুটবল খেলবা, ৯০ মিনিট খেলবা। উনার কথাটা ছিল এমনই। কিন্তু অনিক যখন খেলা শুরু করল, অনিক তো সবার ছোট, আর সবসময় তো ছোটদের আবদারটা রাখা হয়। অনিক বরাবরই আবদারগুলো আমার মাধ্যমে করাত। আর আব্বা আমার কথা শুনতেন, পরামর্শ বলেন আর এমনি কথাই বলেন। ক্রিকেটের সাথে সখ্যতা আসলে আমাদের জেনারেশন থেকে তৈরি। আমার ছোট ভাই অপুকে দেখে অনিক, এরপর আমি, ছোটবোন আসল।
আর কিপিংয়ের বিষয়টা হল, আমি তো মিডিয়াম পেস বোলিং করতাম। এরপর দেখলাম এতে কষ্ট হয়, হয়ে গেলাম অফ স্পিনার। একবার আমাদের দলে উইকেটকিপারের সঙ্কট হল, তখন আমি গিয়ে দাঁড়ালাম। জিনিসটা হল, আমি আর আমার ভাই যেহেতু উইকেটকিপার, তাই কিপিংয়ে আমার হাতটাও সেভাবেই যেত।
প্রশ্ন: ভাইয়ের সুবাদে গর্বিত বোন এখন সব জায়গায় পরিচিত হচ্ছেন জাকেরের বোন হিসেবে। অনুভূতিটা কেমন?
শাকিলা ববি: অনুভূতিটা আসলে খুব ভালো। আমার কাছে মনে হয় বিগত কয়েকদিনে আমার যে পরিমাণ ছবি তোলা হয়েছে, জাকের আলি অনিকের বোনের সাথে ছবি তুলবে বলে, এই জিনিসটা গত কয়েকদিনে এত শুনেছি, এটা অনেক ভালো লাগার। আবার এটা নিয়ে একটা ভয়ও আছে। যখন খারাপ করবে, তখন কিন্তু আমাকেও দোষারোপ করা হবে যে, বোন বেশি কথা বলে, তাই ভাই রান করতে পারে না। সামনে এমন দিনও আসবে, আমি এটা নিয়ে প্রস্তুত আছি।
তবে হ্যাঁ, এই অনুভূতিটা আসলেই অন্যরকম। যেমন ইএসপিএনে আমাদের ভাই-বোনকে নিয়ে নিউজ করা হয়েছে, এটা আমার জন্যে একটা বড় অর্জন। বাংলাদেশের সব মিডিয়া, আপনারা এটা কভার করেছেন। আর বিসিবি আমাকে যে সম্মানটা দিয়েছে, সেটার জন্য আমি আসলেই কৃতজ্ঞ। অনিকের অভিষেক হয়েছে, প্রথম সাক্ষাৎকারটা তারা আমাকে দিয়ে করিয়েছে। আসলেই অসাধারণ একটা অনুভূতি। আপনাদের টি-স্পোর্টসের মাহফুজ ভাইয়ের ভিডিও আমি নিয়মিত দেখি, উনি যেদিন আমার সাথে কথা বললেন, সেদিন খুব ভালো লেগেছিল।
দিন যত যাচ্ছে, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ১১তম আসর নিয়ে উন্মাদনা বেড়েই চলেছে। নানা আয়োজনে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) চেষ্টা করছে এবারের আসরকে সবচেয়ে স্মরণীয় করে রাখতে। সেই ধারায় এবারের বিপিএলের মাসকটও বেছে নেওয়া হয়েছে, যার নাম রাখা হয়েছে ডানা ৩৬। শান্তির প্রতীক হিসেবে সেখানে দেখা যাবে একটি সুসজ্জিত পায়রাকে।
বিপিএলের মাসকটটিকে স্বাধীনতা এবং ক্রীড়া চেতনার স্থিতিস্থাপকতার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। ডানা বিস্তৃত, আত্মবিশ্বাসী, আনন্দদায়ক হাসিতে পায়রাটি গ্রাফিতি শিল্পে সজ্জিত একটি ক্রিকেট ব্যাট ধরে আছে। এর পালকের রঙিন গ্রাফিতি প্যাটার্ন এবং ব্যাট আমাদের স্বাধীনতা, ইতিবাচক শক্তি এবং সাংস্কৃতিক গর্বের থিম উপস্থাপন করে। এই প্রাণবন্ত মাসকটটি একটি উজ্জীবিত চেতনা বহন করে, যা ক্রিকেট নিয়ে রোমাঞ্চ এবং উদযাপনকে ফুটিয়ে তোলে।
আরও পড়ুন
বিপিএলের টাইটেল স্পন্সর ডাচ-বাংলা ব্যাংক |
এই পায়রার মাসকটটিকে স্বাধীনতার চেতনার সাথে মেলবন্ধন ঘটানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যা খেলাধুলার একটি অপরিহার্য অংশ এবং ক্রিকেট সংস্কৃতিরও একটি মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। পায়রাকে শান্তি এবং স্থিতিস্থাপকতার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়, যা একটি জাতির শক্তি এবং ঐক্যকে প্রতিফলিত করে। মাসকটের গ্রাফিতিটি আধুনিক, তারুণ্যের স্পর্শময়, যা সমসাময়িক ক্রিকেট ভক্তদের প্রগতিশীল, প্রাণবন্ত প্রাণশক্তির সাথে আমাদের স্বাধীনতার ঐতিহ্যগত মূল্যবোধকে একসুতোয় গেঁথেছে।
এবারের বিপিএল শুরু হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর। টুর্নামেন্টের পর্দা উঠবে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি। এবারের আসরে অংশ নিচ্ছে সাতটি দল -
রংপুর রাইডার্স, ঢাকা ক্যাপিটালস, চিটাগং কিংস, দুর্বার রাজশাহী, ফরচুন বরিশাল, খুলনা টাইগার্স ও সিলেট স্ট্রাইকার্স।
দীর্ঘদিন ধরে আছেন জাতীয় দলের বাইরে। খেলে যাচ্ছিলেন কেবল ঘরোয়া ক্রিকেট। দেশের ক্রিকেটের অন্যতম অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ইমরুল কায়েস ঘোষণা দিয়েছেন টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের। বুধবার নিজেই নিশ্চিত করেছেন বিষয়টি।
নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও পোস্ট করে লাল বলের ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর কথা জানিয়েছেন ইমরুল। সাদা বলের ক্রিকেটে অনেকটা সময় ধরেই বাংলাদেশ দলের বাইরে থাকলেও এই দুটিতে খেলার দুয়ার খোলা রেখেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার।
আরও পড়ুন
‘অভাগা যেদিকে চায়, সাগর (ইমরুল) শুকিয়ে যায়’ |
২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে এই ফরম্যাটে পথচলা শুরু হয় ইমরুলের। শেষবার খেলেছেন ২০১৯ সালের নভেম্বরে, ভারতের বিপক্ষে। মাঝের এই সময়ে খেলেছেন ৩৯টি ম্যাচ। ৭৬ ইনিংসে ২৬.২৮ গড়ে রান করেছেন ১ হাজার ৭৯৭। সেঞ্চুরি তিনটি আর ফিফটি চারটি।
টেস্টে ইমরুলের সর্বোচ্চ ইনিংসটি এসেছিল ২০১৫ সালে। খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ড্র হওয়া ম্যাচে খেলেছিলেন ১৫০ রানের দারুণ এক ইনিংস। ওই ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে তামিম ইকবালের সাথে ওপেনিং জুটিতে ইমরুল যোগ করেছিলেন রেকর্ড ৩১২ রান।
আরও পড়ুন
ছয়ের রেকর্ডে তামিমের সঙ্গী ইমরুল |
চলতি এনসিএলে খেলছেন ইমরুল। শেষ ম্যাচে সিলেটের বিপক্ষে দুই ইনিংসে করেছেন যথাক্রমে শূন্য ও ৭১ রান।
২ দিন আগে
২ দিন আগে
৩ দিন আগে
৩ দিন আগে
৩ দিন আগে
৬ দিন আগে
৭ দিন আগে
৮ দিন আগে
৮ দিন আগে
১৯ দিন আগে