২ মার্চ ২০২৪, ৪:০৫ পিএম
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ছেড়েছেন বেশ আগেই। বিপিএলের আগে কয়েক মাসে বাইরে ছিলেন সব ধরণের ক্রিকেট থেকেই। সব মিলিয়ে তামিম ইকবাল তাই কেমন করবেন, তা নিয়ে কিছুটা আলোচনা ছিল। তবে ফরচুন বরিশালকে চ্যাম্পিয়ন করা এই ব্যাটার সর্বোচ্চ রান করার পাশাপাশি হয়েছেন টুর্নামেন্ট সেরাও। তামিম মনে করেন, নির্ভার থেকে খেলতে পারাটাই কাজে দিয়েছে।
সদ্য সমাপ্ত বিপিএলে শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি তামিমের। তবে আসর এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে চেনা ছন্দে দেখা যায় তাকে। শেষ চার ম্যাচে করেন দুই ফিফটি। সব মিলিয়ে ১৫ ম্যাচে করেন ৪৯২ রান। তাতে এই প্রথম ম্যান অব দ্য খেতাবও যায় তার ঝুলিতে।
আরও পড়ুন: সর্বোচ্চ রানস্কোরার তামিমই টুর্নামেন্ট সেরা
বিপিএলে কি সমালোচকদের জবাব ছিল? এমন প্রশ্নে তামিম শোনান খেলোয়াড় হিসেবে পাওয়া তার ভিন্ন এক শিক্ষার কথা। “আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এমনও সময় ছিল, যখন আমাকে নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, আমি দলে থাকব কি থাকব না তা নিয়ে। তখন সবাইকে ভুল প্রমাণ করতে চাইতাম, আর সেটা করতে গিয়ে শিখেছি যে, নিজের ওপর চাপ তৈরি করছি। তখন চিন্তা করতাম, ৫০-১০০ করে দেখিয়ে দেব। যখনই এভাবে চিন্তা করতাম, নিজের ওপর চাপ তৈরি করতাম। ফলে পরের ম্যাচ শুরুর আগেই চাপে থাকতাম আমি। ১৭ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে আমি এই জিনিসটাই শিখেছি। এটাই সাহায্য করেছে।”
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তিন ফরম্যাটে সেঞ্চুরি করা বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার তামিমের অর্জনের খাতা বেশ সমৃদ্ধ। অভিজ্ঞ এই ওপেনার মনে করেন, এতগুলো বছর শীর্ষ পর্যায়ে জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করার পর তার আর নিজেকে প্রমাণের কিছুই নেই। “সত্যি বলতে এভাবে যদি ভাবতাম যে, জবাব দিতে হবে, তাহলে হয়তো এমনটা করতে পারতাম না। আমি এই জিনিসটাই চিন্তা করিনি যে, আমাকে জবাব দিতে হবে। আমার ক্যারিয়ার যদি ৩ বছরের হতো, তাহলে হয়তো ভাবতাম যে জবাব দেওয়া দরকার। আমি কী করেছি না করেছি, সবাই তা দেখেছে।”
মাঝারি রান তাড়ায় মেহেদি হাসান মিরাজের সাথে নাজমুল হোসেন শান্ত যখন ব্যাট করছিলেন, বাংলাদেশ শিবিরে উঁকি দিচ্ছিল সহজ জয়। তবে সেট হয়ে অধিনায়ক শান্তর বিদায়ের পর নামে ধস। টানা উইকেট হারিয়ে বিশাল হারের স্বাদ পেতে হয়েছে সফরকারীদের। বাংলাদেশ কাপ্তান মনে করেন, ভুল সময়ে তার আউটেই দলের সর্বনাশ হয়েছে।
আরও পড়ুন
২৩ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে বড় পরাজয় বাংলাদেশের |
বোলারদের দারুণ পারফরম্যান্সে প্রথম ওয়ানডে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য ছিল মাত্র ২৩৬। রান তাড়ায় এক পর্যায়ে স্কোর ছিল ২ উইকেটে ১২০। ফিফটির সুবাস পাওয়া শান্ত ৪৭ রানে ফিরতেই রাতারাতি বদলে যায় চিত্র। মাত্র ২৩ রানে শেষ উইকেট হারিয়ে ৯২ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। ব্যাটিং অর্ডার ধসিয়ে দেন ৬ উইকেট নেওয়া রহস্য স্পিনার আল্লাহ গাজানফর। তার বোলিংয়ের সামনে দিশেহারা হয়ে যান ব্যাটাররা।
ম্যাচ শেষে শান্ত বলেন, তারই উচিত ছিল ম্যাচ শেষ করা আসার।
“আমরা প্রথম ১৫-২০ ওভারে ভালো শুরু পেয়েছিলাম। কিন্তু মাঝের ওভারগুলোতে আমরা নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন নবি। আমাদের আগ্রাসী হওয়ার দরকার ছিল না। বোলারদের জন্য উইকেট যথেষ্ট সাহায্য করেছিল। আমি মনে করি শহিদি ও নবি সত্যিই ভালো ব্যাটিং করেছে। আমার উইকেটই পার্থক্য তৈরি করেছে। আমি সেট ব্যাটার ছিলাম এবং আরও বেশি সময় ব্যাট করতে হত।”
শান্তর প্রশংসা পাওয়া ইনিংস খেলে আফগানিস্তানের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডারই মূলত ব্যাট হাতে পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন দলের জন্য। ৭১ রানে ৫ উইকেট হারানোর পোড় খেলেছেন ৭৯ বলে ৮৪ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। তার ব্যাটে চেপে যে লড়িয়ে স্কোর পায় আফগানরা, সেটা ডিফেন্ড করতে স্পিন ভেলকি দেখান গাজানফর।
আরও পড়ুন
মুস্তাফিজ-তাসকিনের তোপ সামলে নবির ব্যাটে চড়ে আফগানিস্তানের লড়াকু পুঁজি |
শান্ত অবশ্য মনে করেন, গাজানফরের স্পিনের সামনে তাদের এই বিপর্যয় নিছকই দুর্ঘটনা মাত্র।
“আফগানিস্তান দলে সবসময় রহস্যময় স্পিনার থাকে এবং সে (আল্লাহ গাজানফর) সত্যিই ভালো বোলিং করেছে। আমাদের প্রস্তুতিটি দুর্দান্ত ছিল, কিন্তু দিনটা আমাদের ছিল না। আশা করি আমরা এখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারব।”
রান-রেটের নেই চাপ, ২ উইকেটে রান ১২০ - ২৩৬ রান রান তাড়ায় এরপরও কী চাপে পড়ে হেরে যাওয়া সম্ভব? সহজ ম্যাচ কঠিন করার অবিশ্বাস্য মিশনে নেমে সেটাই করে দেখাল বাংলাদেশ৷ যে ম্যাচে আফগানিস্তানের ফেরার সুযোগ প্রায় শেষই হয়ে যাচ্ছিল, ব্যাটারদের নাটকীয় ব্যর্থতায় সেই ম্যাচেই নাজমুল ইসলাম শান্তর দল পরাজয় বরণ করল বিশাল ব্যবধানে। শারজাহ’র ইতিহাস গড়ার ম্যাচে বাংলাদেশের সঙ্গী হল ভুলে যাওয়ার এক অভিজ্ঞতা।
শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবারের ম্যাচে আফগানিস্তান গুটিয়ে গিয়েছিল ২৩৫ রানে। মাত্র ২৩ রানে শেষ ৮ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ রান তাড়ায় থেমেছে ৩৪.৩ ওভারে মাত্র ১৪৩ রানে। ৯২ রানের জয়ের তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে লিড নিল আফগানরা।
আরও পড়ুন
২৩ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে বড় পরাজয় বাংলাদেশের |
মাঝারি রান তাড়ায় বাংলাদেশের ধাক্কা খায় দ্বিতীয় ওভারেই। অফ স্পিনার আল্লাহ ঘাজানফারের ক্যারম ডেলিভারি ধরতেই পারেননি তানজিদ হাসান তামিম। ব্যাত-প্যাডের ফাঁক গলে হন বোল্ড। তবে সেখান থেকে খুব দ্রুতই দলকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যান অভিজ্ঞ সৌম্য সরকার ও নাজমুল হোসেন শান্ত। ফজলহক ফারুকির এক ওভারে দুই চার মেরে ভালো কিছুরই আভাস দেন সৌম্য।
অন্যপ্রান্তে শান্তও চড়াও হন বোলারদের ওপর। চার-ছয়ের মারে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে এই জুটি যোগ করেন পঞ্চাশ রান। জুটি যখন ভালোভাবেই সেট, ঠিক তখনই বিপত্তি। আজমতউল্লাহ ওমারজাইয়ের বলে পুল করতে টাইমিং হয়নি সৌম্যর। বাউন্ডারির সামনে থেকে ফাইন লেগে থাকা ফারুকির দারুণ ক্যাচে শেষ হয় তার সম্ভাবনাময় ৩৩ রানের ইনিংস।
আরও পড়ুন
মুস্তাফিজ-তাসকিনের তোপ সামলে নবির ব্যাটে চড়ে আফগানিস্তানের লড়াকু পুঁজি |
এই উইকেট পতনের পর কমে আসতে থাকে রানের গতি। চারে নামা মেহেদি হাসান মিরাজ কিছুটা সাবধানী ব্যাটিং করায় ঝুঁকি নিচ্ছিলেন শান্ত। আর তা করতে গিয়ে ভালো ছন্দে থাকা এই বাঁহাতি ব্যাটারও সেট হয়ে আউট হয়ে যান। মোহাম্মদ নবির বলে সুইপ করতে গিয়ে তুলে দেন ক্যাচ। তার আগে চারটি চার ও ২ ছক্কায় করেন ৪৭ রান। বাংলাদেশের নাটকীয় ব্যাটিং ধসের সেই শুরু।
আর সেটার কারণ শুরু হয় অতি রক্ষনাত্বক ব্যাটিংয়ের কারণেই। ওভারের পর ওভার বাউন্ডারি না আসায় বাড়ে চাপ। সেটা সরাতে গিয়ে ঘাজানফারকে সুইপ করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন মিরাজ। মাত্র ১ ছক্কায় ৫৪.৯০ স্ট্রাইক রেটে করেন মোটে ২৮ রান।
এর পরের ওভারে রশিদ খানের দুর্দান্ত এক গুগলিতে বোল্ড হয়ে চাপ আরও বাড়িয়ে দেন মাহমুদউল্লাহ। এর রেশ না কাটতেই জোড়া ধাক্কায় বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন সেই ঘাজানফার। প্রথমকে মুশফিকুর রহিমকে স্টাম্পড করার পর ফেরান রিশাদ হোসেনকেও।
একপ্রান্তে আশা হয়ে টিকে থাকা তাওহীদ হৃদয়কে লড়াইয়ের সুযোগ না দিয়ে সাজঘরের পথ দেখান রশিদ। বাকি দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়ে একাই বাংলাদেশের হন্তারক বনে যান তরুণ স্পিনার ঘাজানফার। আর এজন্য তিনি গুনেন মাত্র ২৬ রান।
ম্যাচের প্রথম ভাগে বাংলাদেশের বোলাররাও খারাপ করেননি মোটেও। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই রহমানউল্লাহ গুরবাজজে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে শুভসূচনা এনে দেন তাসকিন আহমেদ। দারুণ এক স্পেলে অন্যপ্রান্তে তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন অভিজ্ঞ পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। এই দুজনের তোপে স্রেফ ৭১ রানেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলেছি আফগানিস্তান।
আরও পড়ুন
টসে হেরে বোলিংয়ে বাংলাদেশ, রিশাদের অভিষেক |
তবে ক্রিজে যে ছিলেন দলটির পোড় খাওয়া যোদ্ধা মোহাম্মদ নবি, যিনি অনেকবারই এমন সব চাপের মুখ থেকে দলকে উদ্ধার করেছেন। সেটাই করে দেখান আরও একবার। আগ্রাসী ব্যাটিংটা বেশ ভালো জানলেও পরিস্থিতির চাহিদা বুঝে একটা লম্বা সময় পর্যন্ত ইনিংস টেনে নেন ধীরলয়ে। অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদির সাথে গড়েন ১০৪ রানের মহামূল্যবান এক জুটি, যা শেষ পর্যন্ত গড়ে দেয় ম্যাচের ভাগ্য।
৫২ রানে শহিদির বিদায়ের পর হাত খুলে খেলতে শুরু করেন নবি। হাঁকান কিছু বড় শট। তাতে জাগে তার সেঞ্চুরির আশা। তবে তাসকিনের বল আউট হন ৭৯ বলে ৮৪ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে। চারের মার ছিল চারটি এবং ছক্কা ৩টি। ৫০তম ওভারে গুটিয়ে যাওয়ার আগে তাতে আফগানিস্তান পায় লড়াই করার স্কোর। সমান ৪টি করে উইকেট নেন তাসকিন ও মুস্তাফিজুর।
১ দিন আগে
২ দিন আগে
৩ দিন আগে
৩ দিন আগে
১৪ দিন আগে
২৫ দিন আগে